× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কিশোরগঞ্জ সদরে সুবিধাজনক অবস্থানে বিএনপি নেতা

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:৩৬ পিএম

আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:৪৫ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

জেলার মানুষজনের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা কিশোরগঞ্জ সদর। তাই ভোটের সময় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণেরও চোখ থাকে এ উপজেলার নির্বাচনী পরিস্থিতির ওপর। কেবল পর্যবেক্ষক নয়, সেই সাধারণ জনগণও এখন বলাবলি করছে, নতুন এক সমীকরণ দেখা দিয়েছে সদরের ভোটের মাঠে। কেননা হঠাৎ করেই সদর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেঝো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিনের বলয়ভুক্ত এই নেতা ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে নতুন মেরুকরণ ঘটতে চলেছে এ নির্বাচনে।

প্রসঙ্গত, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সদর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের

 সাবেক সভাপতি মামুন আল মাসুদ খান এবং সদর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বৌলাই ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওলাদ হোসেন এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে সম্প্রতি বহিষ্কৃত) মো. নাজমুল আলম।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশা ব্যক্ত করে মাসুদ আল মামুন খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সব সময় জনগণের পাশে ছিলাম। তাই জনগণ আমাকেই বিজয়ী করবে।’ আওলাদ হোসেন বলেন, ‘দলের পরীক্ষিত একজন কর্মী হিসেবে সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গে রয়েছে। তারাই আমার মূল শক্তি। আগামী ৮ মে তা প্রমাণিত হবে।’

অন্যদিকে নাজমুল আলম জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার বিজয় সুনিশ্চিত। 

ভাই ও বোনের দ্বন্দ্ব ভূমিকা রাখবে ভোটাভুটিতে

স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর) আসনকে কেন্দ্র করে প্রয়াত জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এই জাতীয় নেতার মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি ও তার অনুসারীরা সমর্থন করছেন প্রার্থী মামুন আল মাসুদ খানকে। সংসদ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তারই ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম। তিনি ও তার অনুসারী উপজেলা নির্বাচনে সমর্থন করছেন মো. আওলাদ হোসেনকে। তাদের দুজনের এই দ্বন্দ্বের সূত্রে নির্বাচনের সমীকরণ বারবার পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। 

নির্বাচনী বিধি, নিয়ম ও বাধ্যবাধকতার কারণে সংসদ সদস্য সৈয়দা লিপি এই আসনে প্রচারাভিযানে অংশ নিতে পারছেন না। কিন্তু তার অনুসারীরা সক্রিয় রয়েছে। অন্যদিকে সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম এবং তার অনুসারীরা রয়েছেন পুরোদমে সক্রিয়। আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা জেলা শাখা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু ও তার অনুসারীরাও আওলাদ হোসেনের পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে সৈয়দ টিটুর সমর্থক ও অনুসারী রয়েছে। তাই বৌলাই, যশোদল, দানাপাটুলি, কষাকড়িয়াইলÑ এই চার ইউনিয়নে আওলাদ হোসেন অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। 

কার পক্ষে কাজ করবে তুহিন ও হুমায়ূন বলয়

অনেকেই বলছেন, নির্বাচন থেকে আবদুস সাত্তার সরে দাঁড়ানোর কারণে সুবিধাজনক অবস্থানে উঠে এসেছেন চেয়ারম্যান পদের আরেক প্রার্থী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কৃত) মো. নাজমুল আলম। অলিখিতভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলোর একক চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় আগে থেকেই তার অবস্থান বেশ সুদৃঢ়। এখন আবদুস সাত্তার নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে রাসেল আহমেদ তুহিনের বলয়ের ভোটাররা কী করবেন, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। 

অন্যদিকে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে ভোটের মাঠে ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মসিউর রহমান হুমায়ূন। তারও অনেক অনুসারী রয়েছেন বিশেষত সদর ও হোসেনপুর উপজেলায়। কিন্তু তার এই অনুসারীদের সঙ্গে দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মামুন আল মাসুদ খান ও মো. আওলাদ হোসেনের সখ্য দূরে থাক, রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। হুমায়ূন ও তার সমর্থকরা নীরব থাকলে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার ওপর যদি তিনি ও সমর্থকরা নাজমুল আলমের পক্ষে নীরবে ভূমিকা রাখেন, তা হলে নাজমুল আলমকে পরাজিত করা কঠিন হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। 

যা বলছেন বিশ্লেষক ও রাজনীতিকরা

কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নাসির উদ্দীন ফারুকী মনে করছেন, ‘সদর উপজেলা পরিষদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগ হয়ে যাবে। মসিউর ও তুহিন বলয়ের ভোটাররা এখনও নীরব রয়েছেন। সদরে বিএনপি সব সময়ই বেশি ভোট পায়। সংসদ নির্বাচনে হোসেনপুর উপজেলার ভোট দিয়ে নৌকা প্রতীককে পাস করতে হয়। সে হিসেবে বিএনপির নাজমুল আলম বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। যদি কোনো কারণে মসিউর ও তুহিন বলয়ের সামান্য সহানুভূতিও তিনি পেয়ে যান, তবে তার বিজয় রোধ করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়।’ 

এদিকে জেলা শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম জানাচ্ছেন, ‘এই সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। নাজমুল আলম প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও এটা বলা যায় যে, বিএনপির একেবারে তৃণমূলের অতি উৎসাহী অনেকে যদি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে বসে, তাহলে নাজমুলের জন্য বিজয় সহজতরই হবে।’

একসময়ের ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের বিভক্তি দিন দিন কার্যত প্রকট হচ্ছে। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সংঘাত-সহিংসতার উদাহরণ নেই। তার পরও নীরব এ দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকলে এবং মসিউর-তুহিন বলয়ের ভোটাররা নীরব থাকলে নাজমুল আলম চূড়ান্ত হাসি হাসতে পারেন। কারণ নাজমুল আলমের পক্ষে বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী বেশ সক্রিয় রয়েছেন। চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সামান্য ভোটে তিনি ভাইস চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হয়েছিলেন। তাই ভোটের মাঠে নাজমুল আলমকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়া প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সাত্তার বলেন, ‘নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি দলের নেতাদের জয়ী করতে। এখন দেখতে পাচ্ছি, দুই প্রার্থীর মধ্যে চরম কোন্দল-দ্বন্দ্ব। এতে অন্য প্রার্থী সুবিধা নিতে পারে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সদর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে চারটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। দুটি বলয় দুই প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়। অন্য দুটি বলয় নীরব। তাই আগামী ৮ মে ভোটগ্রহণের পর প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে। দলীয় নেতারা সক্রিয়ভাবে কার পক্ষে অবস্থান নেবেÑ এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই সুযোগে অন্য কোনো নেতা সুবিধাজনক স্থানে এসে যেতে পারে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা