কোরবানিযোগ্য পশু
অরুপ রতন, বগুড়া
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১২:৪২ পিএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:৪০ পিএম
বগুড়ায় গত বছরের তুলনায় এবার খামারি ও কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় পাঠানো যেতে পারে এসব পশু। তবে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবারের ঈদে লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে গরু লালন-পালন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চার মাস আগে গমের মোটা ভুসি প্রতি বস্তা ১ হাজার ৮০০ টাকা ও চিকন ভুসি ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন মোটা ভুসি ২ হাজার ২০ টাকা ও চিকন ভুসি ২ হাজার ৮০০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ৩০ টাকা দামের চালের খুদ এখন ৩৫-৪০ টাকা কেজি। ধানের কুঁড়া ছিল ১৫ টাকা কেজি, যা এখন বেড়ে ২০ টাকা। ৮১০ টাকার ভুট্টা পাউডার এখন ৯০০ টাকা, মাষকলাইয়ের ভুসি বস্তায় ১ হাজার ৪৫০ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ১ হাজার ৫৫০ টাকার খৈল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায় এবং ৫ টাকা কেজির খড় ১০ টাকা কেজি। এছাড়া খরা মৌসুমে ঘাসের দামও বেড়েছে।
বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার আরাফাত ইসলাম নামে এক খামারি বলেন, ‘আমি এক বছর বয়সি বাছুর কিনে এনেছিলাম। এখন গরুর বয়স সাড়ে তিন বছর। প্রতিদিন ৭০০ টাকার খাবার খায়। আগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যেই হয়ে যেত। কিন্তু খাদ্যের যে দাম বেড়েছে, তাতে আমাদের মতো খামারিদের টিকে থাকা কঠিন।’
একই এলাকার খামারি স্বপন প্রামাণিক বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে গরু পালন করি। গত বছর ভালোই দাম পেয়েছিলাম। এবার বাজার ভালো না। গত ২০ বছরের খামারজীবনে এমন অবস্থা দেখিনি। তবুও প্রত্যাশা করছি ভালো দাম পাব। যদি দাম সেভাবে না পাই, তাহলে গরু পালনের সংখ্যা কমিয়ে দিতে হবে।’
বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের মেঘাগাছা এলাকায় দুই শতাধিক খামার রয়েছে। আবুল কালাম আজাদ নামে এক খামারি বলেন, আমার মোট ৯টি দেশি জাতের গরু রয়েছে। এদের মধ্যে এবার চারটি কোরবানিতে বিক্রি করা হবে। কয়েকজন দাম বলে গেছে। তবে সেটি আশানুরূপ নয়। যেহেতু সময় আছে, তাই ভালো দামের আশায় আছি। যদি খরচের টাকার সাথে লাভই না ওঠে তাহলে এ ব্যবসা করব কীভাবে?
বগুড়া ভান্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব বলেন, এবার আমার খামারে কোরবানিযোগ্য ১২০টা গরু রয়েছে। গত বছর গরুপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হতো। এ বছর বেড়ে ১৫ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক খরচ বৃদ্ধি এবং গরমে গরুর শারীরিক গঠন কম বৃদ্ধি। এ অবস্থায় লাভের মুখ না দেখলে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে।
সূরা অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গত বছর ৪৮টা গরু বিক্রি করেছিলাম। এবার একটাও ষাঁড় রাখিনি। কারণ রিস্ক নিয়ে এই ব্যবসা করা সম্ভব না। খাবারের দাম যদি নাগালে আসে তাহলে আবারও নতুন করে সিদ্ধান্ত নেব।
বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানা গেছে, গত বছর বগুড়ায় ৪৪ হাজার ৩২৯ জন খামারি ছিল। এ বছর বেড়ে ৪৮ হাজার ৪৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের ৯৫ শতাংশই প্রান্তিক পর্যায়ের। জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৫টি। গত বছরের তুলনায় ৮ হাজার বেশি। কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু ২ লাখ ৭০ হাজার ৪১টি, ছাগল ৪ লাখ ২২ হাজার ৬৫৭, ভেড়া ও গাড়ল ৩৯ হাজার ৮৫১ এবং মহিষ ২ হাজার ২৬৬টি। এসব পশু এবার বগুড়া জেলায় চাহিদা পূরণ করেও ২৯ হাজার ১৫৫টি উদ্বৃত্ত থাকবে বলে বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোছা. নাছরীন পারভীন জানান।
তিনি বলেন, বগুড়ায় এ বছর খামারির সাথে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। জেলায় এবার সবার চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ৩০ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এছাড়া আমরা খামারিদের এই গরমে পশুদের হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচাতে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দানাদার খাবারের ওপর চাপ কমিয়ে ঘাস উৎপাদনে মনোযোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করছি।