× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বুড়িগঙ্গা

৪০ টাকার ভাসমান হোটেলে

রানা আহমেদ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১০:২২ এএম

আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ১৭:২০ পিএম

ঢাকার বুড়িগঙ্গার মিটফোর্ড ঘাটে ভাসমান হোটেল।সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

ঢাকার বুড়িগঙ্গার মিটফোর্ড ঘাটে ভাসমান হোটেল।সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো

রাজধানীতে নিম্ন আয়ের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা থাকার জায়গা। দিন এনে দিন খাওয়া অনেক মানুষকে রাস্তার পাশে বা ফুটপাথে রাত কাটাতে হয়। স্বল্প আয়ের অনেকেই তাই বেছে নেন বুড়িগঙ্গার তীরে ভাসমান হোটেল। যেখানে ৪০ থেকে ১০০ টাকায় রাত কাটানো যায়। দিনমজুর, শ্রমিক, হকার ও ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ীরাই এখানে থাকেন। এ ছাড়া দু-এক দিনের জন্য যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে রাজধানীতে আসেন, থাকার জায়গা না থাকলে তারাও বেছে নেন স্বল্প খরচের এসব বোর্ডিং। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬০-এর দশকে বোর্ডিংগুলোর যাত্রা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় যাতায়াত করতেন ব্যবসার কাজে। কাজে আটকা পড়ায় হোটেলের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় কখনও কখনও পড়তেন থাকার সমস্যায়। ফলে কিছু ব্যবসায়ী-মহাজন তাদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে ঢাকার বুড়িগঙ্গায় তৈরি করেন ভাসমান বোর্ডিংগুলো। তখন নৌকার মধ্যে কাঠের তৈরি বোর্ডিং ছিল যেখানে খাওয়া যেত আর পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থা। সে সময় খাওয়ার জন্য টাকা নিলেও থাকার জন্য নেওয়া হতো না। স্বাধীনতার পর থাকার জন্যও টাকা নেওয়া শুরু হয়।

নব্বইয়ের দশকের পরে সংস্কার করে লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় এগুলো। কয়েক বছর পর পর এই নৌযানগুলো ডকইয়ার্ডে পাঠিয়ে সংস্কার ও মেরামত করা হয়ে থাকে। পাঁচ যুগ ধরে এই বোর্ডিংগুলো সদরঘাট এলাকায় থাকলেও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের উন্নয়ন কাজের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশে ২০২০ সালের শুরুতে মিটফোর্ড ঘাটে স্থানান্তর করা হয়।

সরেজমিনে বুড়িগঙ্গার মিটফোর্ড ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, একটি কাঠের তৈরি ছোট এবং পাঁচটি লোহার তৈরি নৌযানের ভাসমান বোর্ডিং। এর মধ্যে কাঠের তৈরি বোর্ডিং ও লৌহার তৈরি অপর একটি ভাসমান বোর্ডিং অনেকটাই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। উমা উজালা, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও বুড়িগঙ্গা নামে চারটি ভাসমান বোর্ডিংয়ে রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। ভাসমান বোর্ডিংয়ে ওঠানামার জন্য নদীর পাড় থেকে রয়েছে বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো। দ্বিতল বোর্ডিংগুলোতে নিচতলা ও দোতলায় দুপাশে সারিবদ্ধভাবে কক্ষ আর মাঝ দিয়ে রাস্তা। আবার কোনোটায় রয়েছে অতিথিশালা। বোর্ডিংগুলোতে প্রথম কক্ষেই থাকেন একজন ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার)। আর দুপাশের সারিতে এক সিট ও দুই সিটের কক্ষ, যা কেবিন নামেও পরিচিত। রয়েছে উন্মুক্ত ঢালাও বিছানার কক্ষ, যেখানে তিন-চারজন একসঙ্গে থাকেন নিজেদের কাঁথা-বালিশ নিয়ে। এখানে থাকতে তাদের ভাড়া দিতে হয় জনপ্রতি মাত্র ৪০ টাকা। আর প্রতিটি কেবিনে রয়েছে তোশক, কাঁথা, বালিশ, ফ্যান ও লাইট। এক সিটের কেবিনের ভাড়া ১০০ টাকা, দুই সিটের কেবিনের ভাড়া দিনপ্রতি ১৫০ টাকা। একেকটি বোর্ডিংয়ে ৫০-৬০ জনের মতো থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বোর্ডিংগুলোতে থাকতে পারেন শুধু পুরুষরাই।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদরঘাট ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভাসমান লোক রয়েছে। যাদের থাকার জায়গা নেই। আবার বেশি টাকা খরচ করে আবাসিক হোটেলে থাকার সামর্থ্যও নেই। তারাই থাকেন এই বোর্ডিংগুলোতে। অর্থাৎ বুড়িগঙ্গার আশপাশের হকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মালিকরা গ্রাহকদের সুবিধা মাথায় রেখে সে অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করেন। বোর্ডিংয়ে বিনামূল্যে কম্বল, পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে।

পুরোনো ঢাকার বাদামতলীর ফল বিক্রেতা হাসান জানান, তিনি সেখানে একটি ৮০ টাকার কক্ষে প্রায় ৬ মাস ধরে থাকছেন। এর আগে তিনি একটি আবাসিক মেসে মাসে দুই হাজার টাকা ভাড়ায় থাকতেন। তিনি বলেন, ভাসমান বোর্ডিং হাউজে দৈনিক ভাড়ার ব্যবস্থা ও বিনামূল্যে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা তার জন্য বেশি লাভজনক।

কথা হয় বোর্ডিংয়ে অবস্থানকারী মনির হোসেন নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে, পাসপোর্টের কাজে তিনি ঢাকায় এসেছেন। এখানে ১০০ টাকায় থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত। দুয়েক রাতের জন্য কোনো আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে বিরক্তির কারণ হতে হচ্ছে না। তিনি বলেন, থাকার মতো সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। এখানে কিছু কিনতে হচ্ছে না। সব কিছু রেডিমেড পেয়ে ব্যবহার করছি।

গত সাত দিন ধরে বোর্ডিংয়ে অবস্থান করছেন রবিউল ইসলাম, তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, চাকরির সন্ধানে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছেন। হোটেলে থাকার মতো অত টাকা নেই। তাই এখানে উঠেছেন। এই বোর্ডিংগুলো সম্পর্কে তিনি ইউটিউব থেকে জেনেছেন। এখানে থাকতে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। শুধু ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে এলেই যে কেউ থাকতে পারবে ১০০ টাকার বিনিময়ে।

ফরিদপুর মুসলিম বোর্ডিংয়ের মালিক মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, পাকিস্তান পিরিয়ডে আমার মামা এই ব্যবসাটা করত, এখন আমি করছি। একসময় এখানে মাগনা থাকা যেত। শুধু রাতের খাবার হোটেলে খেলে ঢালা বিছানায় থাকা ফ্রি ছিল। কিন্তু এখন সবকিছুতে অনেক ব্যয় হয়। আমাদের এ বোর্ডিংগুলোতে কখনই কোনো বিশৃঙ্খলা হয় না। শুধু আইডি কার্ড দেখিয়ে যে কেউই থাকতে পারে। অনেকেই আছে মাসের পর মাস ধরে থাকে এখানে। জায়গা পরিবর্তনের কারণে কাস্টমার অনেক কমে গেছে। তবে আস্তে আস্তে ঠিক আগের মতো জমে উঠবে বলে আশা করেন তিনি। 

শরীয়তপুর ভাসমান মুসলিম হোটেলের ম্যানেজার রমজান আলী। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে মেজর শফিউল সাহেব এসব ভাসমান হোটেলের লাইসেন্স দিয়েছিলেন। এখন বিআইডব্লিউটিএর অধীনে আছে। সাধারণত ঘাটের শ্রমিক, হকার ও ক্ষুদ্র ফল ব্যবসায়ীরাই এখানে থাবেন। এ ছাড়াও সদরঘাটের নৌপথে যাতায়াতকারী দরিদ্র মানুষ এখানে রাত যাপন করেন। তবে ব্যবসার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ। নিম্ন আয়ের ব্যবসায়ী যাদের পরিবার থাকে গ্রামে, তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এসব হোটেল। এত অল্প টাকায় ঢাকা শহরে থাকার জন্য আর ব্যতিক্রম কিছু নেই। ভাসমান হোটেল প্রতিদিন রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মানুষ বেশি হলে ছাদেও থাকার ব্যবস্থা আছে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা