× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মানব পাচার

আমার বাবারে ওরা মাইরে ফেলছে

মাহবুব হোসেন সারমাত, গোপালগঞ্জ

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১০:০২ এএম

গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের দিকনগর ইউনিয়নের ফতেপট্টি গ্রামের নিহত রাসেল শেখের বাড়িতে স্থানীয়দের ভিড়। প্রবা ফটো

গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের দিকনগর ইউনিয়নের ফতেপট্টি গ্রামের নিহত রাসেল শেখের বাড়িতে স্থানীয়দের ভিড়। প্রবা ফটো

বাবার ভিটায় একটা বড় ঘর তোলা, ছোট বোনকে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়াসহ একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের দিকনগর ইউনিয়নের ফতেপট্টি গ্রামের কাশেম শেখের ছেলে রাসেল শেখ। তার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে নৌকায় দালালদের নির্যাতনে যে আট বাংলাদেশি মারা গেছেন, তাদের মধ্যে রাসেল শেখ একজন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে স্মৃতি হাতড়ে কিছুক্ষণ পরপর হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন শিল্পী বেগম।

আহাজারি করে বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল বড় ঘর দিবে, ছোট বোনকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে পরে নিজে বিয়ে করবে। আমাগো সবাইরে ভালো রাখবে। আমার বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ হইল না। আমার বাবারে ওরা মাইরে ফেলছে। ওরা আমার ছেলেকে বাঁচতে দিল না। 

শুধু রাসেল শেখই নয়, একই উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ, গোহালা ইউনিয়নের গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইমরুল কায়েসও গিয়েছিলেন স্বপ্নপূরণে। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তাদের স্বপ্ন এলো কফিনে বন্দি হয়ে। এখন তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে প্রতিবেশীরা। 

তাদের লাশ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সৌদিয়া এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়। গতকাল বিকালে আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। রাতে রিফাত শেখ ও রাসেল শেখের মরদেহ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে। বাদ এশা জানাজা শেষে তাদের মরদেহ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ছাড়া ইমরুলের মরদেহ তার নানাবাড়ি পাবনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

শুক্রবার ফতেপট্টি গ্রামে নিহত রাসেল শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম চলছে। মরদেহ দেখতে ভিড় করছে গ্রামের শত শত মানুষ ও স্বজনরা। এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা শিল্পী বেগম আর বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন বাবা আবুল কাশেম। 

আবুল কাশেম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ছোট্ট একটা চায়ের দোকান করে সংসার চালাই। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছি। তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে রাসেল। আমার কষ্ট লাঘব করতে ইতালিতে যেতে চেয়েছিল সে। ভেবেছিল, ইতালি গিয়ে আমাকে একটু শান্তি দেবে। কিন্তু আমার সেই শান্তি দেওয়া ছেলেটির মরদেহ তুলতে হচ্ছে আমার কাঁধে। 

স্বজনরা জানান, দালালদের সঙ্গে কথা ছিল, মাছ ধরার বড় ট্রলার দিয়ে সমুদ্র পার করে দেবে। কিন্তু তারা ৩০ জনের ধারণক্ষমতার নৌকায় ৫২ জনকে নৌকার পাটাতনের নিচে ঢুকিয়ে মেরে ফেলেছে। এ সময় রাসেল হত্যার বিচার চান স্বজনরা। 

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কয়েক যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে তারা দুবাই হয়ে উড়োজাহাজে করে লিবিয়ায় পৌঁছান। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশে রওনা হন তারা। মাঝপথে তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যাওয়ার পথে তাদের নির্যাতন করা হয়। এতে রাজৈরের কোদালিয়ার সজীব কাজী, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামে মামুন শেখ, সেনদিয়ার সজল বৈরাগী, কদমবাড়ির নয়ন বিশ্বাস, কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রিফাদ, রাসেল ও ইমরুলের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এক পাকিস্তানি নাগরিকও মারা যান। খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্ট গার্ড।

নিহত রাসেলের মামা মো. কবীর শেখ বলেন, দিগনগর ইউনিয়নের কানুরিয়া গ্রামের সুমন বলেছিল, ১৩ লাখ টাকা দিলে রাসেলকে ইতালি পাঠানো যাবে। তারা রাসেলকে নেওয়ার কয়েক দিন পর তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, তিন দিন খেতে দেয়নি। নৌকার পাটাতনের নিচে লুকিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় মৃত্যু হয়। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। ছেলেটা চেয়েছিল পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে। কিন্তু ছেলেটা লাশ হয়ে এভাবে দেশে আসবে, সেটা কখনও আশা করিনি আমরা। এ সময় তিনি দালালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা