× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাত বদলেই বাড়ে এলাচের দাম

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪ ১৬:৪৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

রমজানের ঈদের কয়েক দিন আগেও ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বাজার খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। সেই এলাচ এখন খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানেই খাতুনগঞ্জে কেজিতে এলাচের দাম বেড়েছে অন্তত এক হাজার টাকা। 

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, একটি পক্ষ কারসাজি করেই এলাচের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পুঁজিবাজারের মতো বাজারে এলাচের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে তারা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এলাচ বিক্রির ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ এক হাত থেকে অন্য হাত বদল হলেই বাড়ছে দাম। 

খাতুনগঞ্জে পণ্য বিক্রি হয় ডিও স্লিপের মাধ্যমে। মিল মালিক ও আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডিও স্লিপের মাধ্যমে পণ্য কিনেন ব্যবসায়ীরা। পরে ওই পণ্য ডেলিভারি দিলে সেগুলো আড়তে রেখে বিক্রি করা হয়। এই ডিও স্লিপ হাত বদল হলেই দাম বাড়ছে এলাচের। আমদানিকারকের কাছ থেকে ডিও স্লিপ কেনার পর সেটি কয়েক দফায় হাত বদল হচ্ছে। প্রতিবারই কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। তাই হাত বদল হলেই বেড়ে যাচ্ছে এলাচের দাম।

এদিকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাতুনগঞ্জে এখন এলাচের দাম বাড়লেও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে এখনও এলাচের দাম আগের বছরের মতোই রয়েছে। এলাচ আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগের বছর এ সময়ে এলাচের আমদানি মূল্য যা ছিল, এখনও একই রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এখন শুল্কায়ন মূল্য বেশি। আমদানিকারকদের অভিযোগ শুল্ককর বেশি আদায় করতেই শুল্কায়ন মূল্য বেশি দেখিয়ে এলাচ শুল্কায়ন করছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গুয়াতেমালা থেকে ১০ হাজার ৭৫০ কেজি এলাচ আমদানি করে খাতুনগঞ্জের এস এম এন্টারপ্রাইজ। প্রতি কেজি ৬ ডলার ঘোষণা দিয়ে আনা ওই এলাচ ৭ দশমিক ৫ ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিল অব এন্ট্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি ডলার ১০৬ দশমিক ৩২ টাকা মূল্যে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করে এম এম এন্টারপ্রাইজ। সেই হিসেবে ওই এলাচ প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ছিল ৭৯৭ টাকা। 

অন্যদিকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৬ হাজার কেজি বড় সাইজের এলাচ আমদানি করে বগুড়া সদরের বাইজিদ ট্রেডার্স। প্রতি কেজি ৭ দশমিক ৫০ ডলার ঘোষণা দিয়ে আনা এলাচ ২৫ ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিল অব এন্ট্রির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি ডলার ১১০ টাকা মূল্যে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করে বাইজিদ ট্রেডার্স। সেই হিসাবে ওই এলাচ প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ছিল ৮২৫ টাকা।

এই আমদানি মূল্যের এলাচই এখন খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ এক বছর আগে এই এলাচ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। বছরের ব্যবধানে আমদানি মূল্য একই থাকলেও পাইকারিতে বেড়ে গেছে দাম। 

ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে এখন নতুন এবং পুরাতন দুই ধরনের এলাচ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন এলাচ (যে এলাচের মেয়াদ ২০২৪ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। অন্যদিকে পুরাতন এলাচ (যে এলাচের মেয়াদ ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত) বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। অথচ মাসখানেক আগেও এই পুরাতন এলাচ বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। 

পাইকারিতে প্রতি কেজি এলাচ আমদানি মূল্যের চারগুণের বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, ক্রেতারা অল্প পরিমাণ কেনে বিধায় ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমদানিকারকরা এলাচ বেশি দামে বিক্রি করেন। অল্প পরিমাণে কেনায় ক্রেতারাও এটি নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করেন না। 

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, শুল্ককরের কারণেই এলাচের দাম বেড়ে যায়। এলাচ আমদানিতে সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশের মতো বিভিন্ন শুল্ককর দিতে হয়। কাস্টম হাউস এখন অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে এলাচ শুল্কায়ন করে। যে কারণে বাজারে এলাচের দাম হু হু করে বাড়ছে। বড় দানার এলাচ শুল্কায়ন করে ২৫ ডলারে। অথচ ওই এলাচের আমদানি মূল্য ৭ থেকে ৮ ডলার। শুল্কায়ন মূল্য বেশি ধরার কারণে এখন কেজিতে শুল্ককর বেশি দিতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। 

উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ (চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর) কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে এলাচ আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৮৪৪ মেট্রিক টন। এই হিসেবে গত অর্থবছর প্রতি মাসে গড়ে এলাচ আমদানি হয়েছে ৪০৩ মেট্রিক টন। সেখানে এবার চলতি অর্থবছরের গত আট মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে এলাচ আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। গড়ে প্রতি মাসে আমদানি হয়েছে ৩৩৮ মেট্রিক টন। 

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশে তিন ধরনের এলাচ আমদানি হয়। এর মধ্যে বড় দানার সবচেয়ে উন্নত মানের এলাচ আমদানি হয় ভুটান থেকে। মাঝারি সাইজের মোটামুটি ভালো মানের এলাচ আমদানি হয় গুয়াতেমালা থেকে। এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও কিছু এলাচ আমদানি হয়। 

আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৭ দশমিক ৫০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১২ ডলারে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাব করলে প্রতি কেজি এলাচের আমদানি মূল্য পড়ছে ৮২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ টাকা। শুল্ককর পরিশোধ করার পর ওই এলাচ খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এই হিসেবে প্রতি কেজি এলাচে ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ লাভ করছেন। 

এলাচের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মশলা আমদানিকারক আরাফাত রুবাই প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পাইকারিতে এলাচের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে শুল্ককর অন্যতম ভূমিকা রাখে। এলাচে সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশের মতো শুল্ককর দিতে হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এখন ঘোষিত আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে শুল্কায়ন করছে। তাতে শুল্ককর বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে এলাচের পাইকারি দামে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুল্ককর ছাড়াও নানা কারণে এলাচের দাম বাড়ে। খাতুনগঞ্জে ডিও স্লিপের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনা হয়। এই ডিও স্লিপ যত বেশি হাত বদল হবে, ততই ওই পণ্যের দাম বাড়বে। এলাচের ক্ষেত্রে এখন সেটি হচ্ছে, একজনের কাছ থেকে অন্যজন বেশি দামে ডিও কিনছেন। আর তাতে বাজারে এলাচের দাম বেড়ে যাচ্ছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা