× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রামগতিতে জমে উঠেছে ভোট, আলোচনায় দুই প্রার্থী

আমানত উল্যাহ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪ ১৫:০৩ পিএম

আপডেট : ০১ মে ২০২৪ ১৫:১০ পিএম

বাঁয়ে রোকেয়া আজাদ ও ডানে আবদুল ওয়াহেদ। ছবি কোলাজ : প্রবা

বাঁয়ে রোকেয়া আজাদ ও ডানে আবদুল ওয়াহেদ। ছবি কোলাজ : প্রবা

প্রথম ধাপে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রকাশ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। সংঘর্ষ ও মারামারির সম্ভাবনাও রয়েছে। 

রামগতির জনপ্রিয় ‘ভূমিহীন নেতা’ খ্যাত আজাদ উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। মেঘনা নদীবেষ্টিত উপকূলীয় এ অঞ্চলে উন্মুক্ত নির্বাচনের হাওয়ায় জমে উঠেছে নির্বাচন। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর থেকে শুরু হয় প্রচার-প্রচারণা। বিভিন্ন কৌশলে ভোটারদের মন জয় করা, জনসমর্থন আদায়ে সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন প্রার্থীরা। আবার অনেক প্রার্থী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে উঠান বৈঠক করছেন। দোয়া ও সমর্থন চাচ্ছেন ভোটারদের। নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ও চায়ের দোকানে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে চলছে আলোচনা ও তর্কবিতর্ক। 

এলাকার সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহলের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সৎ, নিষ্ঠাবান ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে তারা বিজয়ী করতে চান। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় রোকেয়া আজাদ ও আবদুল ওয়াহেদকে দেখছেন তারা। 

কারণ হিসেবে আটজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, আজাদ উদ্দিন চৌধুরী ভূমিহীন নেতা থেকে জনমানুষের নেতায় পরিণত হয়েছেন। তারই স্ত্রী ও প্রথম নারী উপজেলা চেয়ারম্যান রোকেয়া আজাদকে নিয়ে তাদের আগ্রহ বেশি।

এদিকে রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ, রোকেয়া আজাদ, শরাফ উদ্দীন আজাদ সোহেল, জামশেদ আলম চৌধুরী ও মাহবুবুর রহমান। চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রচারণায় রয়েছে তিন প্রার্থী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ, সাবেক প্রথম মহিলা উপজেলা চেয়ারম্যান রোকেয়া আজাদ ও শরাফ উদ্দীন আজাদ সোহেল। এ তিনজন প্রার্থী মাঠে থাকলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দুজন প্রার্থীর মধ্যে। প্রার্থীরা হলেনÑ আব্দুল ওয়াহেদ (দোয়াত কলম) ও রোকেয়া আজাদ (আনারস)। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উপজেলা বিএনপি রোকেয়া আজাদের পক্ষে থাকায় তার জয়ের পাল্লা মোটামুটি শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

তবে নির্বাচনের শুরু থেকে স্থানীয় এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিএনপির সাবেক বহিষ্কৃত নেতা শরাফ উদ্দীন আজাদ সোহেলকে সমর্থন দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলের এমপি বিএনপি নেতাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করতে কোমর বেঁধে নামায় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এতে করে দলের বিশাল একটি অংশ রোকেয়া আজাদ ও আবদুল ওয়াহেদের পক্ষে অবস্থান নেয়। অন্য দিকে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ রোকেয়া আজাদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় তার পাল্লা এখন অনেকটা ভারী হয়ে ওঠে। তবে রোকেয়া আজাদের গণসংযোগে জনতার ঢল দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবর্তনের আভাস লক্ষ করা গেছে।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী রোকেয়া আজাদ বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। আগের চেয়ারম্যান রামগতিকে উন্নয়নের দিক থেকে ২০ বছর পিছিয়ে নিয়েছে। কোনো উন্নয়ন হয়নি। তাই পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে। এবার আনারসের পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।

আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী রামগতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমেই আমি বিজয়ী হব। মানুষ পরিবর্তন চায়। তাই ভোটাররা আমাকেই ভোট দেবেন। উন্মুক্ত নির্বাচনে জনগণ প্রভাবমুক্ত হয়ে ভোট উৎসবে অংশ নেবে। তাই আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহবুব রুমান চৌধুরী বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের সবার প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি, জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রামগতি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৮ জন।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ‘চরগজারিয়ার’ ভূমিহীনদের সংগঠিত করে তাদের অধিকার আদায়ে মাঠে নামেন মরহুম আজাদ উদ্দিন চৌধুরী। ভূমিহীনদের পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে হয়ে যান ভূমিহীন নেতা। তিনি ১৯৫০ সালের ২৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম হারিছ আহমদ এবং মায়ের নাম বেগম আনোয়ারা। হাতিয়া দ্বীপ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আলেকজান্ডার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দুবার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ সালে রামগতি পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন এই নেতা।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক আইনজ্ঞ মরহুম সিএসপি আবদুর চৌধুরীর হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন আজাদ উদ্দিন। তিনি প্রথমে বিএনপির রাজনীতি করলে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০২১ সালের প্রথম দিকে রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। চরগজারিয়ার ভূমিহীন মানুষদের সংগঠিত করার মাধ্যমে নেতৃত্ব দান শুরু হয় তার। এক নামে সবাই আজাদ উদ্দিনকে ভূমিহীন নেতা হিসেবে চেনেন। একসময়ে তিনি হন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রধান শিরোনাম। এরই ধারাবাহিকতায় তার উত্থান ঘটে। এরপর আজাদ নেতা নামে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। তবে রাজনীতির মাঠে তাকে আলোচনায় নিয়ে আসেন মরহুম আবদুর রব চৌধুরী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আজাদ উদ্দিন চৌধুরী হরিণ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল্যাহ আল মামুনের কাছে পরাজিত হন।

দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মামলা জটিলতায় নির্বাচন করতে না পারলেও তারই স্ত্রী বেগম রোকেয়া আজাদকে নির্বাচিত করেছেন তিনি। রোকেয়া আজাদ ছিলেন বাংলাদেশের দুজন মহিলা উপজেলা চেয়ারম্যানের একজন। বর্তমানে তিনি এ উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের নেত্রী হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ তাকে স্বাগত জানিয়ে আলেকজান্ডার বাজারে বের করেন আনন্দ মিছিল। 

আজাদ নেতার মৃত্যুর পর নেতৃত্বের দায়িত্ব পড়ে তারই স্ত্রী রোকেয়া আজাদের ওপর। বর্তমান তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধ করেছেন আজাদ উদ্দিন চৌধুরী।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রকোপে তিনি মারা যান। লকডাউন এবং করোনা-সংক্রমণ ভয় উপেক্ষা করে তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এতেই বোঝা গেছে তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা