× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জীবন-জীবিকা

কুড়িয়ে পাওয়া ইট ভেঙে চলে তাদের জীবন

মেরিনা লাভলী, রংপুর

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪ ১৩:০৩ পিএম

আপডেট : ০১ মে ২০২৪ ১৩:০৮ পিএম

কুড়ানো ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করছেন নারীরা। রংপুর নগরীর রবার্টসনগঞ্জ এলাকায়। প্রবা ফটো

কুড়ানো ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করছেন নারীরা। রংপুর নগরীর রবার্টসনগঞ্জ এলাকায়। প্রবা ফটো

তীব্র দাবদাহ। মাথার ওপর তপ্ত সূর্য। এর মাঝেও ইটের ওপর সমানতালে চলছে হাতুড়ি। একের পর এক ইট ভাঙছেন একদল নারী। তাদের গা বেয়ে ঘাম ঝরছে আর তৈরি হচ্ছে খোয়া। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তারা এমন সংগ্রামী জীবনের গল্প রংপুর নগরীর আলমনগর রবার্টসনগঞ্জ এলাকার রানী, সেলিনা, বিলকিস ও আমেনাদের।

তারা জানান, রবার্টসনগঞ্জ মসজিদের পাশে একটি খোলা জায়গায় ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ইট কুড়ানো ও খোয়া ভাঙার কাজ করে আসছেন বস্তিতে বসবাস করা ৫০ জনের বেশি নারী। এদের মধ্যে কারও স্বামী নেই। কারও সন্তান ভরণ-পোষণ দেয় না। কারও স্বামী অসুস্থ, বেকার। কেউ দিনমজুর স্বামীর সংসারে সচ্ছলতা ফেরানের চেষ্টায় ইট ভাঙার কাজ করেন। অসচ্ছল পরিবারের এসব নারী সদস্য প্রতিদিন বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। বাসাবাড়ি, ঝোপঝাড়, রাস্তার পাশে কিংবা নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশ থেকে ফেলে দেওয়া পুরো কিংবা ভাঙা ইট কুড়িয়ে বস্তায় ভরেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ইট কুড়ানোর কাজ। এরপর দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা হাতুড়ি দিয়ে সেই ইট ভেঙে খোয়া করেন। খোয়া ভাঙতে প্রায় দিনই হাতুড়ি কিংবা ইটের আঘাতে হাত ফেটে যায়, পা ফেটে যায়। এরপরও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে তারা অব্যাহত লড়াই-সংগ্রাম করে যান। এসব নারী চার থেকে পাঁচ বস্তা খোয়া ভাঙতে পারেন। স্থানীয়রা এখান থেকে স্বল্প মূল্যে খোয়া কিনে নিয়ে প্লাস্টার, ঢালাইসহ নানা কাজে ব্যবহার করেন।

ষাট বছর বয়সি ইটভাঙার কাজ করা বিলকিস বেগম বলেন, খোয়া বিক্রি হলে খাওয়া হয়, যেদিন বিক্রি হয় না, সেদিন খাওয়া হয় না। প্রতিদিনই হাতুড়ি দিয়ে হাতে লাগে, নখে লেগে ফেটে যায়। আমাদের অনেক কষ্ট হয়। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই, দুপুরে ইট কুড়িয়ে ফিরে আসি। দিনে চার বস্তা খোয়া ভাঙতে পারি। শরীর ভালো থাকলে পাঁচ বস্তা পর্যন্ত ভাঙা যায়। ইনকাম হয় দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। দুই ছেলে বিয়ে করার পর তারা আলাদা সংসার পেতেছে। তারা কিছু দেয় না। এ কাজ করেই আমার দিন চলে যায়। 

রানী বেগমের বয়স ২৫ বছর। বলেন, ক্যাম্পে থাকি। ছোটবেলাতেই এলাকার এক ছেলের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। স্বামী তেমন আয়-রোজগার করতে পারে না। লেখাপড়াও করি নাই। ঘরের ভাড়া দেওয়া, দুই ছেলেসহ চারজনের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। সেজন্য ইট কুড়াই, আবার খোয়া ভাঙি চলি। হাতুড়ি দিয়ে হাত-পা ফেটে গেলে সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ আনি। সেখানে ওষুধ পাওয়া না গেলে দোকান থেকে বাকিতে আনি। খোয়া বিক্রি হলে টাকা পরিশোধ করে দিই। 

পঞ্চান্ন বছর বয়সি বিলকিস বেগম বলেন, অভাবের সংসার আছে। তাই ২০ বছর ধরে ইট ভাঙছি। বাসাবাড়িতে কাজ করি না। কারণ সেখানে বাড়িওয়ালা শুধু আমার জন্য ভাত দেয়। বাসায় দুই সন্তান ও স্বামী আছে। এক প্লেট ভাতে কি চারজন মানুষের পেট ভরবে। এজন্য ইট ভাঙি। সপ্তাহে ছয়-সাতশ টাকা হয়, সেটা দিয়েই চলি। আমার মা ইট ভাঙত, এখন আমি ভাঙি। আমাদের সাথে আমাদের ছেলেমেয়েরাও ইট ভাঙতে সাহায্য করে।

সেলিনা বেগমের বয়স ৬৮ বছর। তিনি বলেন, শীতের দিন চাদর গায়ে দিয়া ইট কুড়াই। গরমের দিন তাও একটু দম নিয়া ইট ভাঙা যায়। বর্ষার দিন কাজ থাকে না। কেউ ভাত দিলে খাই, না হলে না খায়া থাকি। আল্লাহ আমাদের পয়দা করছে, সেই আধার দেয়। যে কয়েকদিন বাঁচি আছি এমন করি চলি যাইতে পারলেই ভালো হয়।

তাদের সম্পর্কে রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, সরকারের সুষম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার স্লোগান হলো কাউকে পেছনে ফেলে নয়। সুতরাং এসডিজি অর্জন করতে হলে সমাজের সকল মানুষকে নিয়ে কাজ করতে হবে। যে সমস্ত নারী এখনও সমাজের মূলধারার সাথে নেই, তাদের জীবন-মান উন্নয়নে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়তে পারব। 

এই নারীদের ভাগ্য উন্নয়নের সরকার কী ভাবছে জিজ্ঞেস করলে রংপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আব্দুল মতিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের আয়বর্ধনমূলক কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এতে তারা স্বাবলম্বী হয়ে জীবন-মান উন্নয়ন করতে পারছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের পাশে সমাজসেবা অধিদপ্তর রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা