শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৪৭ এএম
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫৭ এএম
তীব্র দাবদাহে গাছেই শুকিয়ে ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি। সম্প্রতি বিরল উপজেলার মাধববাটী এলাকায়। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের বাগানি ও চাষিরা প্রকৃতির রসগোল্লাখ্যাত ‘লিচু’ নিয়ে এবার চরম বিপাকে পড়েছেন। লিচুগাছে মুকুল থেকে গুটি আসার পরপরই অব্যাহত অনাবৃষ্টি আর দাবদাহের কারণে সেগুলো ঝরে পড়ছে। এই অবস্থায় সেচসহ পরিচর্যা করে লিচু রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বাগান মালিক ও চাষিরা।
লিচুপুরী হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রাম। এ গ্রামের চাষি খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপের কারণে এবার লিচুর ফলন নিয়ে শঙ্কায় আছি। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হবে। মুকুল থেকে গুটি বের হতে না হতেই ঝরে যাচ্ছে। গাছে সেচ আর স্প্রে করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’
সদর উপজেলার মাসিমপুর এলাকার লিচু চাষি মোবাররক হোসেন জানান, তার বাগানের লিচু গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। এবার লিচু নিয়ে বেশ লাভের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু গুটি আসা অবস্থায় তীব্র রোদ আর গরমের কারণে পুড়ে গেছে। ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি।
লিচুবাগানি মমিনুল জানালেন, লিচুকে কেন্দ্র করেই চলে তাদের জীবন ও জীবিকা। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণে লিচুর ফলন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এবার কী হবে, এ নিয়ে তারা খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
প্রদীপ কুমার গুহ নামে আরেকজন বলেন, ‘লিচুর মুকুল থেকে গুটি আসার সময় সাধারণত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ভালো হয়। এর বেশি হলে লিচু ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেশি। এবারের তাপমাত্রা খুবই অসহনীয়। তাই লিচু নিয়ে চিন্তা হওয়ারই কথা।’
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তাপমাত্রা এইভাবেই কদিন অব্যাহত থাকবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। এখন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আজ (সোমবার) দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
মাধববাটী, মাসিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লিচুর বাগানে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিচ্ছেন চাষিরা। বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জের লিচু চাষি আজাহার বলেন, সেচ দিতে বাড়তি খরচ হলেও এখন এ ছাড়া উপায় নেই। গুঞ্জাবাড়ি এলাকার লিচু চাষি আকাশ ও নয়ন জানান, এ বছর মুকুল দেখে অনেক খুশি ছিলাম। রোদের তাপে সব ঝরে গেছে। তাই লাভের আশা বাদ দিয়ে গাছ টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত।
বিরল প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমএ কুদ্দুস জানান, প্রতি বছর লিচুর মৌসুমে এই অঞ্চলে হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান হয়। অনেকের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল এ লিচুর ওপরেই। এবার লিচু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষি। যারা মৌসুমি লিচু বাগান ক্রয় করেছেন, তাদের মধ্যে চরম হাতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকে বাগান ছেড়ে চলে গেছেন।’
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান বলেন, ‘চাষিদের বিকালে বা সন্ধ্যায় লিচুগাছে নিয়মিত সেচ এবং স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা যেভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন, তাতে লিচুর ফলনের বেশি ক্ষতি হবে না।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, ‘জেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে লিচুর গাছ রয়েছে। এবার প্রচুর মুকুল আসার পরও বৈরী আবহাওয়ার কিছু ঝরে যাচ্ছে। এভাবে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে এ মৌসুমে লিচুর ফলনে বিপর্যয় দেখা দেবে। প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে লিচু রক্ষায় চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন সঠিকভাবে সেচ দিতে হবে, ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।’