দিনাজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৩ পিএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৩ পিএম
নিহত মোহাম্মদ আলীর মরদেহ ঘিরে শোকার্ত স্বজনদের ভিড়। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রবিবার রাতে ভোটের ফলাফল নিয়ে দুই ইউপি সদস্যপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে একজন নিহত হয়। আহত হয় চার পুলিশসহ অন্তত ১২ জন।
এলাকায় এখনও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় বিরল উপজেলার চৌরঙ্গীবাজার এলাকায় সিঙ্গুল হামিদ-হামিদা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আলী কাচুয়া। তার বয়স ৬৫ বছর। তিনি বিরল উপজেলার সিঙ্গুল ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মাবুদ বক্সের ছেলে। নিহত আলী কাচুয়া সদ্যবিজয়ী ইউপি সদস্য প্রার্থী (টিউবওয়েল) জোবায়দুর রহমানের চাচা।
ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদসহ, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানে আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ জানান, ‘ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছিল। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু দুই ইউপি সদস্যপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ফলাফল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে উত্তেজিত সমর্থকেরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে ফিরে আশ্রয় নিলে সমর্থকেরা ভোটকেন্দ্রেও হামলা চালান। উত্তেজিত জনতা এক পর্যায়ে নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জোর করে একটি রুমে বন্দি করে রাখে।’
‘ওদিকে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল মারামারি লাগে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বাধ্য হয়ে শর্টগানের ৬৭ গ্রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে ওই ব্যক্তি আহত হয়। তাকে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী হায়দার আলী জানান, ‘আজিমপুর ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যেই শেষ হয় গণনা। কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর মেম্বার পদে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ১ নম্বর ওয়ার্ডের টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে জবাইদুর রহমান ২০ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। পরাজিত প্রার্থী সাইদুর রহমানের সমর্থকরা ফল মেনে না নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে হামলা চালায়।’
‘এতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ উত্তেজনা থামাতে চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে উত্তেজিত জনতা ভোটকেন্দ্রে ও পুলিশের ওপরে চড়াও হন। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি গুলি ছোড়ে। গুলি মোহাম্মদ আলী চাচার শরীরে লাগে। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।’
দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো.জিল্লুর রহমান জানান, নিহত ব্যক্তির শরীরে পিঠের বাঁ পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার দিনাজপুরের বিরল উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ছিল। চেয়ারম্যান পদে ১ নম্বর আজিমপুর ইউপিতে লিটন আলী, ২ নম্বর ফরক্কাবাদ ইউপিতে হুসেন আলী ও ৫ নম্বর বিরল ইউপিতে মারুফ হাসান নির্বাচিত হয়েছেন।