× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দাবদাহ

পাখিদের পাশে পিয়ারুল

বাবলু মোস্তাফিজ, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া)

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:২৪ পিএম

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৯ পিএম

প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে পাখিদের জন্য গাছে পানির পাত্র বেঁধে দিচ্ছেন পিয়ারুল ইসলাম। প্রবা ফটো

প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে পাখিদের জন্য গাছে পানির পাত্র বেঁধে দিচ্ছেন পিয়ারুল ইসলাম। প্রবা ফটো

এক মাস ধরে প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষজন ও প্রাণিকুল প্রায় বিপণ্ন। তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে বলতে গেলে নামছেই না। বরং কখনও কখনও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর মাটির অনেক গভীরে নেমে গেছে। গ্রামগঞ্জের টিউবওয়েলগুলোয় পানি উঠছে না সপ্তাহ দুয়েক ধরে। টানা তাপপ্রবাহের মধ্যেই পানির খোঁজে হন্যে হয়ে এখানে-ওখানে ছুটছে মানুষ। 

শুধু মানুষ নয়, প্রাণিকুলেও পড়েছে পানির হাহাকার। বিশেষ করে পাখিরা ভয়ানক কষ্ট পাচ্ছে এই প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে। বিষয়টি নজর এড়ায়নি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার কলেজপাড়ার বৃক্ষপ্রেমিক পিয়ারুল ইসলামের। এই প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে পা‍খিদের জন্য গাছে ও বিদ্যুতের খুঁটিতে পানির পাত্র বেঁধে দিচ্ছেন তিনি। দাবদাহ যত দিন থাকবে, পুকুর-জলাশয় ও খালবিলে যত দিন না পানি জমছে, তত দিন তার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। 

গতকাল রবিবার থেকে পিয়ারুল ইসলাম পাখিদের জন্য পানপাত্র বাঁধতে শুরু করেছেন। প্রতিদিন ৪০টি গাছ বা স্থানে পানির পাত্র বাঁধছেন তিনি। এভাবে ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী উপজেলার ২০০ করে মোট ৪০০টি গাছে তিনি পানির পাত্র বেঁধে দেবেন। প্রথম দিনে গতকাল পাত্র বেঁধেছেন ভেড়ামারা শহরের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয় লোকজন এগুলোতে নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবে।

বৃক্ষপ্রেমিক পিয়ারুল ইসলাম পেশায় কৃষক। অভাবের সংসারে খরচ বাঁচিয়ে তিনি এ পর্যন্ত ৮ হাজার তালবীজ, ১০ হাজার ঔষধি গাছসহ বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়েছেন। এ ছাড়াও হাজার হাজার গাছকে পেরেকমুক্ত করেছেন। এখনও তিনি তার এসব কাজ অব্যাহত রেখেছেন। 

পিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এবার তীব্র গরম পড়ছে। মাঠে, খালে-বিলে কোথাও পানি নেই। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। গরমে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। পাখিরাও পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাই আমি এ উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি জানান, একটি মাটির পাতিল বাঁধতে খরচ হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। মাটির পাত্রকে রঙ করে পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পাত্র গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার দিয়ে বেঁধে। পানি যাতে ঠান্ডা থাকে, সেজন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করছি।’

নিয়মিত সড়ক ও রেললাইনের ধারে গাছের চারা রোপণ করে আসছেন পিয়ারুল। সরকারি দপ্তরে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরে ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে সেগুলোর পরিচর্যা করছেন। গাছে পেরেক দিয়ে বিজ্ঞাপনের ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো বন্ধ করতে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সেগুলো উপড়ে ফেলার কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। এবার তিনি তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ পাখির পিপাসা নিবারণে গাছে গাছে পাত্র বেঁধে পানি রাখার উদ্যোগ নিয়েছেন।

শহরের বাসিন্দা জামিরুল বলেন, ‘পিয়ারুল ইসলামকে এত দিন চিনতাম বৃক্ষপ্রেমিক হিসেবে। এবার তার এ উদ্যোগে পাখিদের জীবন রক্ষা পাবে। আমার বাড়ির সামনে পানির পাত্র বেঁধে দেওয়ার পর আমাকে দিনে দুবার করে পানি দিতে তিনি অনুরোধ করে গেছেন। তার এ অসাধারণ উদ্যোগের অংশীদার হয়ে খুবই ভালো লাগছে।’

পরিবেশবিজ্ঞানী গৌতম কুমার রায় বলেন, ‘পাখির জন্য পানি সরবরাহের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মহৎ। চলুন, পিয়ারুল ইসলামের দেখানো পথে আমরাও হাঁটি, পাখির পিপাসা মেটাতে এগিয়ে আসি। যে কেউ তার বাড়ির আঙিনায় এই মানবিক কাজ শুরু করতে পারেন।’ 

ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘পিয়ারুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে প্রকৃতি ও পরিবেশের অনেক কাজ করে থাকেন। এই তীব্র দাবদাহের সময় তার এ উদ্যোগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। আমরা তাকে কিছু পাত্রের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছি।’ এসব পাত্রে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে সেই স্থানের বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা