পাকুন্দিয়ায় উপজেলা নির্বাচন
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১২ পিএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৪ পিএম
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দিয়েছে। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থীকে ঘিরে পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে এক প্রার্থীর পক্ষে মাঠ দখলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারীরা মরিয়া হয়ে উঠছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভোটের মাঠে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ফলে ৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাকুন্দিয়ার আওয়ামী নেতৃত্ব ফের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পুরোনো পথে হাঁটছে।
দলটির নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের অনুসারীরা প্রকাশ্যেই চেয়ারম্যান প্রার্থী এমদাদুল হক জুটনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম রেনুর পক্ষে মাঠে নেমেছে।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে দলটির সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি অংশ সাবেক এমপি একেএম শামছুল হক গোলাপ মিঞার ছেলে একেএম দিদারুল হকের পক্ষে মাঠে সরব রয়েছেন। আবার একটি অংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদলের ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম হাবিবুর রহমান চুন্নুর জন্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ মো. মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী এই পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে এখন পাঁচ ভাগে বিভক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগ।
পাটুয়াভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করতে আসা এমদাদুল হক জুটনকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার অনুসারীরা সমর্থন করার অভিযোগ তুলেছেন একাধিক প্রার্থী। এমপি বলয়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জুটনের পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি এমপি সোহরাব উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ও তার নিজ ইউনিয়ন পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ এক নির্বাচনী সভায় জানিয়েছেন, গত সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্র কমিটিতে যারা ছিলেন, তারাই এবার উপজেলা নির্বাচনে জুটনের কেন্দ্র কমিটিতে থাকবেন। এমপি পক্ষের এমন প্রকাশ্য অবস্থানের পর এমদাদুল হক জুটন এমপির প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মো. রফিকুল ইসলাম রেনুকে সমর্থন দিয়েছেন জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা মো. আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ। কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের সনমানিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত সভায় মো. আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ এই সমর্থন ঘোষণা করেন। সমর্থনের পর রফিকুল ইসলাম রেনুর পক্ষে বিপুল কর্মীবাহিনী নিয়ে সক্রিয় প্রচার-প্রচারণায়ও নেমেছেন তিনি। তার এই সমর্থনের পর রফিকুল ইসলাম রেনুর মোটরসাইকেল আরও গতি পেয়েছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী মকবুল হোসেন অভিযোগের সুরে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন নির্দিষ্ট এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যাকে উনি সমর্থন দিয়েছেন তিনি বিএনপিমনা প্রার্থী। বিএনপির সমর্থক।’
জানতে চাইলে সোহরাব উদ্দিন বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই নির্বাচনে আমি কোনোভাবে কাউকে কোনো সমর্থন দিইনি। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নানা কথা ছড়ানো হচ্ছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেনÑ বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. জুয়েল (মাইক), সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান একেএম ফজলুল হক বাচ্চু (তালা) এবং কলেজ শিক্ষক আতাউর রহমান সোহাগ (উড়োজাহাজ) এই তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার বেগম আপেল (কলস) এবং উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মোছা. ললিতা বেগম বীথি (ফুটবল)।