বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
এম.এ হান্নান, বাউফল (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১১ পিএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৫ পিএম
পটুয়াখালীর বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভবন সংস্কারকাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে পুরোনো নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ। প্রবা ফটো
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভবন সংস্কারকাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংস্কারকাজে প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারক কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছেন। এদিকে পরিদর্শনের পর কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। তিনি ঠিকাদার ও জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে মান উন্নয়ন করে কাজের নির্দেশ দিলেও আমলে নেননি।
জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিভিন্ন ভবন সংস্কারে চারটি প্রকল্পে মোট ১ কোটি ১৪ লাখ ৬ হাজার ২৬১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে মেসার্স বাবর অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী কাজের শেষ করার সময় ১৫০ দিন।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী পুরোনো এসব ভবনের পলেস্তারা, টাইলস, জানালার লোহার গ্রিল, কাঠের দরজা, স্যানিটারি কাজ, বৈদ্যুতিক লাইন ও রঙসহ তিনটি ভবনে ১৯০টি ক্যাটাগরিতে সংস্কারকাজ করার কথা। কাজটি বাবর অ্যাসোসিয়েটস পেলেও পটুয়াখালীর হায়দার খান নামে এক প্রভাবশালী ঠিকাদার সাবকন্ট্রাক্টে নেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রভাব খাটিয়ে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন।
অবশ্য অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে সরেজমিনেও। চুক্তিপত্র অনুযায়ী পুরোনো ভবন, চিকিৎসক ও চতুর্থ শ্রেণির বাসভবনের ছাদ ও দেয়ালের খসে পড়া পলেস্তারা তুলে নতুন করে ১ হাজার বর্গমিটার সিসি ও আরসিসি পলেস্তারা করার কথা। কিন্তু খসে পড়া জায়গায় নামমাত্র পলেস্তারা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের দেয়াল ও ছাদের মরিচা পড়া রড ঘষামাজা করে পলেস্তারা করার কথা ছিল। ঠিকাদার তা না করে যেনতেনভাবে নিম্নমানের বালু ও সিমেন্ট দিয়ে কাজ শেষ করেছেন। হাসপাতালের পুরুষ মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড, অফিসকক্ষ, কর্মচারী ও চিকিৎসক বাসভবনে ১ হাজার ২০০ স্কয়ার মিটার নতুন টাইলস বসাতে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। ঠিকাদার পুরোনো কিছু টাইলসের স্থলে নতুন কিছু টাইলস লাগিয়েছে। তাও বাজারের নিম্নমানের টাইলস বলে অভিযোগ।
ভবনগুলোর দরজা-জানালায় নতুন চৌকাঠ, লোহার গ্রিল, কাঠের দরজা ও মেরামত কাজের জন্য প্রায় ১৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এসব কাজে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। নিম্নমানের অপরিপক্ব গাছের কাঠের দরজা ও জানালা লাগানো হয়েছে। বাথরুমগুলোতে লাগানো হয় নিম্নমানের কম মূল্যের প্লাস্টিকের দরজা। পুরাতন ভবনের নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলার বারান্দায় লোহার গ্রিল লাগানোর কথা থাকলেও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে সাবঠিকাদারের লোকজন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাপে কিছু অংশে লোহার গ্রিল লাগানো হয়েছে। বাকি অংশগুলোতে নামমাত্র মেরামত দেখানো হয়।
অনিয়ম করা হয়েছে স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক লাইনের কাজেও। নতুন লাইট, ফোল্ডার, সকেট, তার, বোর্ড, সুইচ লাগানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ কাজই করা হয়েছে পুরোনো জিনিসপত্র দিয়ে। তিনটি ফ্যানে ব্যবহার করা হয়েছে একটি মাত্র রেগুলেটর। এ ছাড়া স্যানিটারি কাজেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙা ও চুন কংক্রিট না ফেলেই ভবনগুলোতে রঙের কাজ শুরুর পাঁয়তারা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও কর্মচারী জানান, মূল ঠিকাদার কাজ করেন না। পটুয়াখালীর এক ঠিকাদার কাজ করেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় মনগড়াভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যার সবই অনিয়ম-দুর্নীতি। চুক্তিপত্র অনুযায়ী কোনো কাজ করছেন না। মানহীন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছেন। প্রায় সোয়া কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও অর্ধেক টাকার কাজও করছেন বলে দাবি তাদের।
সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘পরিদর্শনকালে দেখা গেছে যথাযথভাবে কাজ হচ্ছে না। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। মান উন্নয়ন ও যথাযথভাবে কাজ করতে জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মামুন বলেন, কাজটি আমি করছি না। পুটয়াখালীর হায়দার খান করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আর সাবঠিকাদার হায়দার খান বলেন, কাজ নিয়ম মেনেই হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলী কাজ তদারকি করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।’
নির্মাণকাজ তদারক কর্মকর্তা ও উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আল ইমরান বলেন, ‘কিছু ভুলত্রুটি হতে পারে। তবে শিডিউল অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে।’ জেলা স্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুল গনি বলেন, ‘অনিয়ম করার সুযোগ নেই। যদি কোনো নির্মাণসামগ্রী নিম্নমানের হয় তা পরিবর্তন করে নতুনভাবে কাজ করা হবে।’