× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঘুষ নিয়ে স্যারকে জানালেন— ‘৮০ হাজার দেওয়ার কথা ছিল, দিয়েছে ৪০’

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৫৮ পিএম

আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০১ পিএম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী মমতাজ বেগমের অফিসে বসে ‘ঘুষ’ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তাকে গুনে গুনে টাকা নিতে দেখা যায়। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই অফিস সহকারী। তার দাবি, কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ভিডিও ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়।

জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যার পরে গুনে গুনে ঘুষ গ্রহণের ৬ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে দেখা যায়, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগম গুনে গুনে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আমজাদ হোসেনের পক্ষে টাকাগুলো নিচ্ছিলেন তিনি। এসময় নিজ কার্যালয়ে বসে ঘুষের টাকা বুঝিয়ে পাওয়ার কথা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করতেও শোনা যায় তাকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিস সহকারী মমতাজের অফিস কক্ষে যান। এসময় মমতাজকে ওই ব্যক্তি পকেট থেকে এক হাজার টাকা নোটের একটি বান্ডিল দেন। মমতাজ বেগম জানতে চান, এখানে কত দিয়েছেন? তখন ওই ব্যক্তি গুনে নিতে বললে, মমতাজ মুখে বলতে বলেন। এরপর মমতাজ টাকার বান্ডিল হাতে নেন এবং টাকাগুলো গুনতে থাকেন।

ওই ব্যক্তি মমতাজ বেগমের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি টাকা তুলতে পারিনি। অনেক কষ্ট করে টাকা এনেছি। প্রথম কিস্তির বরাদ্দ ১ লাখ ৯২ হাজার সই না থাকায় তুলে পারিনি।’

তখন মমতাজ বেগম ওই ব্যক্তিকে বলেন, ‘আপনি ঠকে যাবেন। আপনার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।’

তখন মমতাজ বেগমকে তিনি অনুরোধ করে বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকলে পাবেন।’

‘এ টাকা নিলে আমাকে বকা দিবে’ জানিয়ে মমতাজ বেগম ফোন কল দিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলেন, ‘স্যার (আমজাদ হোসেন) রফিক মেম্বার ৮০ হাজার দেওয়ার কথা ছিল, ৪০ হাজার দিয়েছে। স্যার, এক মাস পর আবার বিল আছে, তখন কেটে রাখতে হবে।’

ভিডিওতে ঘুষ দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি হারবাং মধ্যম পহরচাঁদা এতিমখানার সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য। এ ব্যাপারে তিনি সমাজকল্যাণমন্ত্রী, সচিব, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভিক্ষুকদের সেলাই মেশিন দিবে বলে আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল চকরিয়া সমাজসেবা অফিস। এ চাঁদা দিতে না পারায় ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এতিমখানা পরিদর্শন করে। পরদিনই আমি অফিসে যাই, কেন এসেছি জানতে চেয়ে বকাবকি শুরু করে, “জরিপ ও বিলের সময় দেখিয়ে ছাড়ব” বলে হুমকি দেয়। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের বিল দাখিল করলে আমাকে বলে, পরিদর্শন কর্মকর্তা বিল না দিতে বলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমাজসেবা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ও অফিস সহকারী মমতাজ বেগমের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করি। ২০২৩-২৪ সালের প্রথম কিস্তি ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা তাদের ঘুষ দিতে হবে, অন্যথায় এতিমখানার টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেবে। তাদের কথায় রাজি হয়ে চেক গ্রহণ করি। চলতি এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ সমাজসেবা অফিসে গিয়ে দুপুর ১২টার দিকে অফিস সহকারী মমতাজ বেগমকে ৪০ হাজার দিই। এ টাকা গুনে নেওয়ার সময় জানতে চান, বাকি ৪০ হাজার কোথায়? এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমজাদ হোসেনকে ফোন করে বলে, রফিক মেম্বার আমার সঙ্গে বাটপারি করেছে, দ্বিতীয় কিস্তির সময় ৪০ হাজার টাকা রেখে দেব।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলায় সমাজসেবার তালিকাভুক্ত ২৮টি এতিমখানা রয়েছে। সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন এতিমখানা অডিট করতে গেলে ১০ হাজার টাকা নেন। এ টাকা না দিলে অডিট না করেই চলে আসেন। এতিমখানা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও উপবৃত্তির উত্তোলনের সময় ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ লেনদেন ছাড়াও এ কর্মকর্তার দুর্ব্যবহার করা হয়।’

এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমি কোনো ঘুষ নিইনি। বিদেশ থেকে আমার স্বামীর পাঠানো টাকা গোনবার সময় কেউ উদ্দেশ্যমুলক ভিডিও ধারণ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

অফিস কক্ষে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে আরেক সহকর্মী ফোন করলে তাকে অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জানতে আহ্বান জানান।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হাসান মাসুদ বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা