অরুপ রতন, বগুড়া
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৪৯ এএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৬ পিএম
বগুড়ায় গাবতলী উপজেলার দাসকান্দি গ্রামের আঙ্গুর বেগম আর তার ছেলে আমিনুল ইসলাম ঘানি টানছেন। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
কাঠের তৈরি কাতলার ওপর ২০০ কেজি পাথর। সেই পাথর জোয়াল বেঁধে টেনে ঘোরালে বের হয় তেল। এই কাজের নাম ঘানি টানা। ঘানিতে সরিষা পিষ্ট হয় আর তেল গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে। ফোঁটা ফোঁটা তেল কখন দেড় কেজি হবে সেই অপেক্ষায় থাকেন বৃদ্ধ আঙ্গুর বেগম আর তার ছেলে অসুস্থ আমিনুল ইসলাম।
বগুড়ায় গাবতলী উপজেলার দাসকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, আঙ্গুর বেগম আর আমিনুল ইসলাম নিরিবিলি ঘানি টানছেন। আমিনুল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পাঁচ কেজি সরিষা থেকে বের হয় দেড় কেজি তেল। এজন্য ঘানি টানতে হয় টানা চার ঘণ্টা। তেলের সাথে পাওয়া যায় খইল।’ এসব বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। এর মধ্যেও স্বপ্ন দেখেন ভালো কিছু করার।
তিনি জানান, তারা বাপ-দাদার আমল থেকে ঘানিতে সরিষা ভেঙে তেল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বাবা ছহির উদ্দিন আড়াই বছর আগে মারা গেছেন। সেই থেকে পাঁচজনের সংসারের ঘানি টানছেন মা-ছেলে।
আমিনুল বলেন, তিনি নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু অসুস্থ হওয়ায় সে কাজ আর কাজ করতে পারেন না। তাই নিজেদের ঘানি থাকায় এটাই করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ঘানিতে পাঁচ কেজি সরিষা ভেঙে দেড় কেজি তেল আর তিন কেজি খইল পাই। তাই দিয়ে চলছে পাঁচজনের সংসার।’ তার শারীরিক যে অবস্থা তাতে তিনি চার ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারেন না। তাদের জমিজমা নেই। সামর্থ্য নেই একটা গরু কেনার।
ষাটোর্ধ্ব আঙ্গুর বেগম বলেন, ‘অভাবের সংসার। বিয়ের পর স্বামীর সাথে ঘানি টানার কাজ শুরু করি। তিনি মারা যাওয়ার পর এখন ছেলে এই কাজে সাহায্য করে। আমাদের গরিবের দিকে কেউ তাকায় না। আমারও বয়স হয়েছে। এই বয়সে শরীর আর চলে না।’ এলাকার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আহসানুল কবির ডালিম বলেন, ‘আধুনিক সভ্যতার এ যুগে মা-ছেলের কাঠের ঘানি টেনে সংসারের বোঝা বইয়ে নেওয়া অমানবিক। সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এমন পরিবারের পাশে।’ উপজেলার কাগইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা বলেন, ‘আমরা খোঁজখবর নিয়ে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করব। এছাড়া এ বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।’