রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৪ এএম
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১৮ এএম
ঠাকুরগাঁওয়ের শুক নদ খননের দুই বছরেই আবার ভরাট হয়ে গেছে। সম্প্রতি তেলা। প্রবা ফটো
সরকার ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন ও শুক নদ খনন করেছিল, যাতে ব্যয় হয়েছিল ২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তাছাড়া সরকার ৩৫ কিলোমিটার খনন করা টাঙ্গন নদের দুই ধারে এক লাখ বর্গমিটার এলাকায় ঘাস ও সাত হাজার গাছের চারা রোপণ করেছিল। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না। খননের দুই বছরেই নদ আবার ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষায় সামান্য পানি থাকে। টাঙ্গন ও শুক নদের দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই যে, একসময় প্রমত্ত ছিল নদ দুটি। যাতায়াতের মাধ্যম ছিল। এর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর। এখন জেলার প্রধান এই নদ দুটিতে চলছে ধান চাষ।
জেলা শহরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খননের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড তদারক করেনি। এলাকার মানুষ নদের বুকে ধান চাষ করছে। দেখলে মনে হয় নদ না, কোনো ড্রেন। অনেকে অন্য জায়গা থেকে মাটি নিয়ে এসে ভরাট করে ধান চাষ করছে। জেলেরা জীবিকার তাগিদে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।
নদ খনন, ঘাস ও বৃক্ষরোপণের কাজ পেয়েছিল ঢাকার তাজুল-নিয়াজ জেভি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি খননকাজ উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশচন্দ্র সেন। কাজটি ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় ২০২২ সালের শেষের দিকে।
ঠাকুরগাঁও সদর খালপাড়া গ্রামের প্রবীর দাস বলেন, ‘একসময় মাছ শিকার আমার পেশা ছিল। নদী খনন হওয়ার পর মনে হয়েছিল আবার নদীটা আগের রূপ ফিরে পাবে এবং আমরা মাছ ধরব। এখন বাধ্য হয়ে রিকশা চালাই।’ বরুনাগাঁও এলাকার বজলু হক বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরে আমাদের সংসার চলে, কিন্তু কয়েক বছর ধরে নদীতে মাছ পাওয়া যায় না। মাছ ধরা বাদ দিয়ে এখন দিনমজুরের কাজ করছি।’
নারগুন ইউনিয়নের কৃষক কুদ্দুস আলী বলেন, ‘নদীতে একসময় অনেক পানি ছিল। সেই পানি কৃষিকাজে ব্যবহার হতো। এখন একহাঁটুর কম পানি থাকে।’ রোড খানকা এলাকার শুক নদ ভরাট করে ধান চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক গুলজার আলী। তিনি বলেন, ‘নদী ভরাট হয়ে গেছে। তাই ধান চাষ করছি। শুধু আমি না। আমার মতো অনেকেই এটা করেছে।’
ঠাকুরগাঁও সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, সরকার অনেক টাকা খরচ করে নদগুলো খনন করেছে, যাতে সবসময় পানি থাকে এবং কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য নদগুলো মরা খালে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি তদারক করে তাহলে নদগুলো আগের রূপ ফিরে পাবে, যা জেলার জন্য এই খরা মৌসুমে আশীর্বাদস্বরূপ।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র আঞ্জমান আরা বেগম বন্যা বলেন, ‘সরকার খনন করেছে, কৃষকরা যাতে লাভবান হয় এবং সবসময় যাতে নদ বহমান থাকে। কিন্তু কিছু মানুষ নদ ভরাট করে ধান চাষ শুরু করেছে। খনন করা হলেও আবার ভরাট হয়ে গেছে। পুনঃখনন না করায় বর্তমানে দখল করে ধান চাষ করছে স্থানীয় লোকজন। অবৈধ দখলের কারণে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। অচিরেই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে।’
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি। জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন ও শুক নদ ভরাট করে ধান রোপণ করছে স্থানীয় কিছু মানুষ। জায়গাগুলো দখলমুক্ত করব। পুনরায় নদ খনন করে আগের রূপে ফেরাতে আমরা কাজ করছি।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, দখলের জায়গাগুলোয় আমরা উচ্ছেদের ব্যবস্থা করছি। শুকনো মৌসুমে নদে ধান চাষ করে দখলে নিলেও বর্ষায় পানি হলে তা দখলমুক্ত হয়ে যায়। নদ রক্ষায় সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে। পুনরায় নদগুলো খননের কাজ শুরু হবে।