× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন

১০ বছরেও বিচার পায়নি নিহতের স্বজনরা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩৮ পিএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০৮ পিএম

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলায় প্রভাবশালী আসামিরা। ফাইল ফটো

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলায় প্রভাবশালী আসামিরা। ফাইল ফটো

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ১০ বছর হয়েছে আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল)। ওই ঘটনার পর তিন বছরের মধ্যে দুটি ধাপে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে শেষ হয় বিচার। পরে সেই মামলার চূড়ান্ত বিচার সাত বছর ধরে আপিল বিভাগে ঝুলে আছে।

দীর্ঘ সময় ধরে আপিলসহ ডেথ রেফারেন্স (আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।

বিভিন্ন সময়ে সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবে না হওয়ায় ৭ পরিবারের মধ্যে ৫টি পরিবার অর্থাভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এদিকে সন্তান হত্যার বিচার দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে মারা গেছেন নিহত সিরাজুল ইসলামের বাবা মনির হোসেন। জামাতা হারানোর শোক নিয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম।

এখন সন্তান হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেবন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ‘৩ বছরের মধ্যে নিম্ন আদালতে ও উচ্চ আদালতে সাত খুনের মামলা দ্রুত রায় হয়েছে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫ বছর ধরে মামলাটি ঝুলে আছে। এখন মামলার বাদী সরকার। আমরা তো আর কিছুই করতে পারছি না। এখন যা কিছু করার, সরকারকেই করতে হবে। এটা এখন সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তারপরও আমরা অপেক্ষায় আছি। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ১০টি বছর পার করেছি। জানি না আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে।’

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নুপুর বেগম বলেন, ‘দশ বছর ধরে বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছি। কিন্তু বিচার তো পাচ্ছি না। বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’

নিহত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাবা খুব অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। আজ ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী। বাবা হাসপাতালে যাওয়ার আগে ভাইকে খুঁজছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, বাবার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। মৃত্যুর আগে যেন ভাইয়ের খুনিদের বিচার দেখে যেতে পারেন সেই কামনা করেন বাবা। আদালত শিগগিরই শুনানি শেষে রায় কার্যকর করবেন বলে বিশ্বাস।’

নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বলেন, ‘প্রথমদিকে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে মামলার রায় দ্রুতই হয়েছিল। এখন মামলার কোনো অগ্রগতি দেখছি না। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। আমরা এ মামলার বিচার পাব কি না তাও জানি না। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখনও ঝুলে আছে। বিচার বিভাগের কাছে দাবি দেশব্যাপী আলোচিত এ সাত খুন মামলাটি যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়।’

আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বলেন, ‘আমরা হতাশ। উচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি। শিগগিরই অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করার জন্য অনুরোধ করব।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘নিম্ন আদালত এ মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ ও যুক্তিতর্ক সম্পন্ন করে বিজ্ঞ বিচারক আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন। আশা করছি নিম্ন আদালতের এ রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকবে।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘৭ খুনের ঘটনাটি শুধু এ দেশেই নয় দেশের বাইরেও নাড়া দিয়েছিল। দেশের বাইরে থেকেও এর সুষ্ঠু বিচারের দাবি উঠেছিল। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন মামলাটি বর্তমানে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে- এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। রাষ্ট্রের কাছে তিনি দাবি জানান, এ মামলাটির দ্রুত শুনানি এবং নিষ্পত্তি করে রায়টি দ্রুত কার্যকর করার।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিম।

অপহরণের ৩ দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলাম ও চন্দন সরকারসহ ৬ জন এবং ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ একে একে ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যা নদীর শান্তিরচর এলাকায়।

আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড এক সময় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে ওঠে। আর এ সমালোচনার ঝড় তোলার প্রধান কারণ ছিল এর সঙ্গে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা (লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, লে. কমান্ডার এমএম রানা, মেজর আরিফ) ও হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নূর হোসেনের জড়িত থাকার বিষয়টি।

এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।

পরবর্তীতে জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যবেক্ষণ করে ৩৩ মাস পর এ মামলার রায় দেন। রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বাকি ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৫ আসামিই র‌্যাব সদস্য। পরে আসামি পক্ষের লোকজন উচ্চ আদালতে রায়ের বিপক্ষে আপিল করলে উচ্চ আদালত ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট কাউন্সিলর নুর হোসেন ও বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।

হাইকোর্টের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ১৫ আসামি হলেন, র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক দুই কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার (চাকরিচ্যুত) এম মাসুদ রানা, সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, আরওজি-১ মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হিরা মিয়া, সিপাহি আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন ও সৈনিক তাজুল ইসলাম।

মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন হয়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১১ আসামি হলেন, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহজাহান ও জামালউদ্দিন।

এদের মধ্যে পলাতক পাঁচ আসামি হলেন, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, নূর হোসেনের সহকারী সানাউল্লাহ সানা ও ম্যানেজার শাহজাহান।

এ ছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিও র‍্যাবের বরখাস্ত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানের ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, করপোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স করপোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহি নুরুজ্জামানের ১০ বছর করে এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিন সাত বছর করে কারাদণ্ডাদেশ উচ্চ আদালতে বহাল রয়েছে। তাদের মধ্যে মোখলেসুর রহমান ও কামাল হোসেন পলাতক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা