ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৬ পিএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৫৯ পিএম
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় বুড়া চিন্তামন মেলায় বিক্রির জন্য আনা হয়েছে ঘোড়া। শুক্রবার তোলা। প্রবা ফটো
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ৯ অথবা ১০ তারিখে বসে এ মেলা। মাসব্যাপী এ মেলার মূল আকর্ষণ ঘোড়ার মেলা। এবারও মেলায় এসেছে বাহারি নামের বিভিন্ন ঘোড়া। তবে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে ‘সম্রাট’ নামের ঘোড়াটি। মালিক ঘোড়াটির দাম হাঁকছেন তিন লাখ টাকা। তবে ক্রেতারা সম্রাটের দাম দুই লাখের বেশি বলেননি।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী এলাকায় এ মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুল। মেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবুল হাসান আজাদের সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম ডাবলু, প্রধান শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তীব্র দাবদাহের মধ্যেও জমে উঠেছে বুড়া চিন্তামনের ঘোড়ার মেলা। এ মেলা ঘিরে এলাকাবাসীর আনন্দের কমতি নেই। স্থানীয়রা জানান, ঐতিহ্যবাহী এ মেলা ২০০ বছরেরও পুরোনো। ১৩ বৈশাখ থেকে কেনাবেচার ছাপা (রসিদ) কাটা হয়। মূল আয়োজন এক মাসের হলেও পশুর মেলা হয় ১০ দিন। ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগল বেচাকেনা হয়।
মেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আবুল হাসান আজাদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পরও নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে মেলায় ঘোড়া এসেছে। এখন বিদেশ থেকে ঘোড়া না এলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলায় ঘোড়া আনেন মালিকরা।’
সম্রাট ঘোড়ার মালিক নওগাঁর ধামইরহাটের গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, সম্রাটের বয়স ১২ বছর। সাদা রঙের এ ঘোড়া দেখতেও সুন্দর। এটি রেসের ঘোড়া, দ্রুত দৌড়াতে পারে। আমি নিজেই এটির যত্ন নিই। দাম চেয়েছি তিন লাখ টাকা। তবে দুই লাখ পর্যন্ত দাম উঠেছে। ৪০ বছর ধরে এ মেলায় আসেন বলেও জানান গোলাম মোস্তফা।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিন শতাধিক ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। দুমকী, সিডর, দুর্বার, বিজলি, কিরণমালা, রানী, সুইটিসহ বাহারি সব নাম এসব ঘোড়ার। ক্ষিপ্রতা আর বুদ্ধিমত্তায়ও মেলে নামের সার্থকতা। এমন নানামুখী গুণের কারণে দেশি-বিদেশি ঘোড়াগুলোর কদরও রয়েছে। পছন্দের ঘোড়া কিনতে চলে দরকষাকষি। দরদাম ঠিক করার পর পাশের খেলার মাঠে ক্রেতাকে দেখানো হয় ঘোড়ার দৌড়।
মোলায় নাগরদোলা, গ্রামীণ বিভিন্ন খাবারের দোকান ও খেলাধুলার আয়োজনসহ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। আয়োজকরা বলছেন, দেশের অন্যতম ঘোড়া বেচাকেনার মেলা এটি। এজন্য আট একর জমি নির্ধারিত আছে। এখানে মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রশস্ত মাঠে হাট বসে। তহশিল অফিস, ডাকঘর, সমবায় অফিস, ক্লিনিক, খেলার মাঠ ও ইউপি অফিসের কারণে জায়গাটি গুরুত্বপূর্ণ।
৭৫ বছর বয়সি শিক্ষক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দছিম উদ্দীন মণ্ডল বলেন, মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘোড়া নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। মেলার শুরু এবং শেষ হওয়ার তারিখ দেশব্যাপী ঘোড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখস্থ রয়েছে।
আলাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউ) চেয়ারম্যান নাজমুস সাকিব বাবলু বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এমন মেলা উত্তরবঙ্গের কোথাও নেই। ফুলবাড়ী থানার ওসি মো. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলার মালিক হচ্ছেন জেলা প্রশাসক। শুক্রবার থেকে মেলায় ঘোড়া বেচাবিক্রির জন্য ছাপা রসিদ বের করা হয়েছে।