মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫৫ পিএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০০ পিএম
কিশোরগঞ্জের হাওরে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। নৌকাগুলো ধান বিক্রির জন্য এসেছে ভৈরবের মোকামে। শুক্রবারের ছবি। প্রবা ফটো
বৈশাখের নতুন ধানে ভরপুর কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মোকামগুলো। এদিকে দাম নিয়েও হতাশ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ধান বিক্রেতারা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ভৈরবের বিভিন্ন মোকাম সরেজমিনে দেখা যায়, একাধিক ধানবোঝাই নৌকা সারি বেঁধে ঘাটে নোঙর করা। সবকটি নৌকাই হাওর থেকে এসেছে। শ্রমিকরা নৌকা থেকে ধান খালাস করে ঘাটে স্তূপাকারে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখছেন।
হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জের শাহ হোসেন মাঝি ধানবোঝাই একটি নৌকা নিয়ে ঘাটে এসেছেন। তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে ২ হাজার ৪০০ মণ বৈশাখী ধান নিয়ে ভৈরব মোকামে এসেছি। এই বছর হাওরে ধানের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে।
ধান নৌকা বোঝায় করে ঘাটে ভিড়েছেন হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জের নৌকার মাঝি মো. আশু মিয়া। তিনি বলেন, এই বছর হাওরে প্রচুর ধান হয়েছে। তাই কৃষকরা ধান পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। এসব ধান পাইকাররা ভৈরব মোকামে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। এ বছর ধানের দাম কম। তাই ফসল বেশি পেলেও ধানের দাম না পাওয়ায় মন ভালো নেই কৃষকদের।
গঙ্গা যমুনা ট্রেডার্সের মালিক সত্য সাহা বলেন, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন তো নতুন ধান আমদানির পুরো সিজন। ভৈরব বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি হচ্ছে। তবে বাজারে ধানের ক্রেতা খুব কম রয়েছে। এই বছর হাওরে ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা যদি ন্যায্যমূল্য পান তাহলেই তারা খুব খুশি হবেন।
তিনি আরও বলেন, ঘাটে মাটি ফেলে ধান রাখার জায়গা নষ্ট করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। অনেক নৌকা এখানে না এসে আশুগঞ্জ ঘাটে চলে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের থেকে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের বাঁচাতে সরকার শুরু থেকে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা সুফল পাবেন বলে তিনি জানান।
আজমিরিগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের ধানের ব্যাপারী রফিক উদ্দিন বলেন, এ বছর আবহাওয়া ঠিক থাকায় হাওরের ধান চাষে কোনো সমস্যা হয়নি। বাজারে বাহির এলাকার খরিদদার খুব কম, তাই নতুন ধান বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা সরকারের দাম নির্ধারণের আশায় বসে আছেন। যখন দাম নির্ধারণ করবে, তখনই ক্রেতাদের আগমন বাড়বে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। গত বছর চিটায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন কৃষকরা। বিশেষ করে গেল বছর চিটার কারণে বিআর-২৮ ধান অনেক কৃষক গোলায় তুলতে পারেননি। এবার কোথাও চিটার খবর পাওয়া যায়নি। এবার বৈশাখ মাসের কয়েক দিন আগ থেকে হাওরে মোটা জাতের ধান কাটা শুরু হয়। মোটা জাতের ধানের বিঘাপ্রতি গড় ফলন ২০ থেকে ২২ মণ পাওয়া যাচ্ছে।
কথা হয় ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, বন্দর নগরী ভৈরব ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী স্থান। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে ভৈরব মোকামে হাওর এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান আমদানি হয়ে থাকে। এই ধান বিভিন্ন চাতালে মিলের মালিকরা খরিদ করে থাকেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা তাদের জমিতে ভালো ফসল ফলাতে পেরেছেন। তাই বাজারেও পর্যাপ্ত ধানের সরবরাহ রয়েছে। তবে নতুন ধান প্রতিমণ ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এই দামে বিক্রি করলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন না। কৃষকরা ধান উৎপাদনে যে ব্যয় করেছেন তা পুষিয়ে উঠতে পারবেন না। যদিও কৃষকরা বর্তমান বাজারে ভেজা ও আধা কাচা ধান বিক্রি করছেন। যদি শুকনা ধান বাজারে আসে, তাহলে দাম বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।