× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাহাড়ি গ্রামগুলোয় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

নূর আলম, দুর্গাপুর (নেত্রকোণা)

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩২ পিএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৩ পিএম

নেত্রকোণার দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ভরতপুর এলাকার ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করছেন এক নারী। প্রবা ফটো

নেত্রকোণার দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ভরতপুর এলাকার ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করছেন এক নারী। প্রবা ফটো

নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলায় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শুকনো মৌসুমে পানির সংকট অনেক দিনের। এবার তীব্র দাবদাহে সেই সংকট আরও বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। পাহাড়ি ঝরনার ছড়ার ময়লা পানি ও পুকুরের ঘোলা পানি এখন একমাত্র ভরসা।

দুর্গাপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সদর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল। সেখানকার ১০ থেকে ১২টি গ্রামে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার মানুষের বসবাস। তাদের কষ্টের অপর নাম পানি। পাহাড়ি ঝরনা ছড়ার ও পুকুরের দূষিত পানি দিয়ে করতে হচ্ছে রান্নাবান্না, গোসলসহ সব ধরনের কাজ। খেতেও হচ্ছে সেই পানি। এতে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ওইসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের কষ্ট এখন চরম আকার ধারণ করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর ইউনিয়নের গোপালপুর, ভবানীপুর, ফান্দা, বারমারী, ভরতপুর, গাজিকোনা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় শুকনো মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি ওঠে না। বাধ্য হয়ে পুকুর বা পাহাড়ি ছড়ার পানি খেতে হয়। এতে পেটের অসুখ, চর্ম রোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। ওই গ্রামগুলোতে দিন আনে দিন খায় এমন হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় তাদের পক্ষে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। গ্রামে দু-একজন অধিক অর্থ ব্যয় করে সাবমারসিবল বসালেও বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি।

সদর ইউনিয়নের ফান্দা গ্রামের আদিবাসী নারী অজল মারাক। তিনি দরিদ্র মানুষ। তার বাড়িতে নলকূপ না থাকায় পানির জন্য সারা বছরই কষ্ট করতে হয়। তিনি বলেন, আমরার কল (টিউবওয়েল) নাই। আমরা অনেক আগে থাইকা পাহাড়ের ঝরনার যে ছড়ার পানি আছে ওইডাই খাই। রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করি। খালি আমি না। সবারই এই অবস্থা।

একই এলাকার প্রবন্দ হাজং দীর্ঘদিন পাহাড়ি ছড়ার পানি ব্যবহার করেছেন। এই পানি খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন অনেকবার। তিনি বলেন, এখন একটু ভালো পানি খাওয়ার জন্য অনেক কষ্টে ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে বাড়ির সামনে সাবমারসিবল বসিয়েছি। বারোমারি গ্রামের মোশারফ হোসেনের বাড়িতে একটি নলকূপ আছে। কিন্তু তাতে পানি আসে না। তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে প্রতিদিন পুকুরের পানি ছাঁকনি করে তা দিয়েই রান্নাবান্না, খাবারসহ সব চলে। পানির জন্য খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে। 

সরকারের কাছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসা রেগুলার মানকিন। তিনি বলেন, আমাদের পানির খুবই অভাব। পাহাড়ি ছড়ায় গর্ত করে সে জায়গা থেকেই পানি সংগ্রহ করি সবাই। কিন্তু এই পানি বিশুদ্ধ না হওয়ার নানারকমের রোগ দেখা দেয় সব সময়।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রীতা নকরেক বলেন, আমাদের গ্রামে পানির তীব্র সংকট। পানির অভাবে গোসল, রান্নাবান্না, কাপড়চোপড় পরিষ্কারসহ নিত্য দিনের কাজে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একদিকে যেমন পানির অভাব অন্যদিকে এবারের তীব্র গরমের কারণে পাহাড়ি ছড়া বা পুকুরের পানি দিনের বেলায় অনেক গরম হয়ে থাকে। তাই অনেক রাতে পানি আনতে হয়। তিনি বলেন, সরকারিভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে এলাকার মানুষের উপকার হতো।

কিন্তু এই সমস্যা সমাধানের উপায় দেখতে পাচ্ছেন না সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রামগুলোতে গভীর টিউবওয়েল বসাতে হলে পাথর সরিয়ে প্রায় পাঁচশ ফুট নিচে পর্যন্ত যেতে হয়। তার জন্য যা খরচ তা এখানকার মানুষের জন্য অসম্ভব।

এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দুর্গাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের কারণে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে চাচ্ছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তবে সেই প্রকল্প কেমন বা কবে নাগাদ কাজ হতে পারে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. রকিবুল হাসানও ওই গ্রামগুলোয় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কেমন সেই পরিকল্পনা তা তিনি বলতে পারেননি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা