আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩১ এএম
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫৩ এএম
ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রামে তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এমন দাবদাহের কারণে জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছেন হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ও ঝুঁকিতে থাকা রোগীরা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানান, শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করলেও সেটিকে ‘ভাইরাল ফিভার’ মনে করে প্যারাসিটামল খাচ্ছেন রোগীরা। হিট স্ট্রোকের জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে তারা বলেন, এই জ্বরে ঘাম থাকবে না। সাধারণ জ্বর ৬ ঘণ্টা পর কমে যাবে, তবে হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সেটি হবে না। জ্বরের অবস্থা দেখে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
জানা গেছে, হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সশন হতে পারে। এতে শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সশনে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ দেখা দেয়। দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ ঠিক থাকে তবে শরীর প্রচণ্ড ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সময় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যাবে। ঘাম বন্ধ হয়ে যাবে, ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যাবে এবং নিঃশ্বাস স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হবে। নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হবে, রক্তচাপ কমে যাবে, খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতাসহ প্রস্রাবের পরিমাণও কমে যাবে। রোগী তখন শকে চলে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়বে।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. মো. শাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও তীব্র দাবদাহে দিশাহারা মানুষ। জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বহির্বিভাগে জ্বরের রোগী বাড়ছে। কিন্তু সেই জ্বরের রোগী ‘ভাইরাল ফিভার’ ভেবে বাড়িতে কালক্ষেপণ করে হাসপাতালে আসছেন।’
চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন ওয়ার্ডে সরেজমিন দেখা গেছে, বহির্বিভাগে জ্বর নিয়ে রোগী আসার পর তাদের ১৩, ১৪, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ‘ভাইরাল ফিভার’ নাকি হিট স্ট্রোক হয়েছে, তা জানতে পুরো দেড় থেকে দু’দিন চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া রোগীর শরীর থেকে লবণ বের হয়ে গেলেও তা জানতে ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করাতেও দেরি হচ্ছে। ফলে রোগীর অবস্থা অবনতি হয়ে শকে চলে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় বলেন, ‘হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জ্বর ও পানিশূন্যতা নিয়ে একটা সমস্যা থাকে। সেটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। সাধারণ কিছু নির্ণায়কও থাকে। যা আমরা ডায়াগনোসিস রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হতে পারি।
বসন্তের শেষের দিকে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ ছড়ানোর জন্য এসব অণুজীব দায়ী। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে অণুজীবগুলো বেশিরভাগ রোগ ছড়ায়। তাই খাবার ও পানীয়ের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’