× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দুপুরে মুখ যেন ঝলসে যায়, দিল্লির আকাশে চোখ সবার

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২১ এএম

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৬ এএম

বৃক্ষের ছায়া-শীতল রাজশাহীর একটি সড়ক, বিপরীত চিত্র অপর সড়কে। প্রবা ফটো

বৃক্ষের ছায়া-শীতল রাজশাহীর একটি সড়ক, বিপরীত চিত্র অপর সড়কে। প্রবা ফটো

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানির পরিবর্তে বালু, ঠিক তার ওপরে নীল আকাশ জুড়ে তপ্ত রোদ। আর সেই রোদে উতপ্ত হয়ে ওঠা নদীর বালু থেকে নিঃসরিত ‘লু হাওয়া’ পুরো রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়ছে। একে তো নদীতে পানি নেই; সেই সঙ্গে রাজশাহীর প্রশস্ত সড়কসহ অধিকাংশ ফাঁকা জায়গাতে বড় কোনো গাছপালা নেই। যাওবা ছিল, তা-ও কেটে ফেলা হয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে শুক্রবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১০ শতাংশ। অস্বাভাবিক এমন তাপমাত্রা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ বৃষ্টি।

কিন্তু সহসা বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া দপ্তর। এখানে বৃষ্টির আগে দিল্লির আকাশে মেঘ জমে। কিন্তু সেখানে এখন পর্যন্ত মেঘের লক্ষণ নেই। রাজশাহীতে এর আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শিগগির বৃষ্টিপাত না হলে ধারণা করা হচ্ছে আবার সেই তাপমাত্রা ছুঁয়ে ফেলবে রাজশাহী।

আবহাওয়া অফিস রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি জানালেও স্থানীয়দের দাবি রাজশাহীর তাপমাত্রা আরও বেশি। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। লু হাওয়ায় পুরো মুখমণ্ডল ঝলসে যাওয়ার অবস্থা। একটু কাজ করলেই শরীর যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ নিতান্তই কাজ না থাকলে এই সময়টায় বাইরে বের হচ্ছে না। সবচাইতে অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন দিনমজুর ও কৃষকশ্রেণির মানুষ। ২২ এপ্রিল দুপুরে কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে মারা যান বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কৃষক মন্টু হোসেন। এদিন আবহাওয়া অফিস রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অনেকে প্রশ্ন করছেন, আবহাওয়া অফিস কি তামপাত্রা নিয়ে কারসাজি করছে? এ বিষয়ে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি ন্যাচারাল ও স্ট্যান্ডার্ড স্থানে তামপাত্রা নির্ণয় করি। যেখানে কোনো পিচ বা কংক্রিট নেই। ঘাস ও মাটির তথা ন্যাচারাল স্থানে মিটার রেখে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। তবে আমাদের প্রদর্শিত তাপমাত্রার চাইতে শহরের যেখানে পিচঢালা সড়ক, যানবাহনের চলাচল, কংক্রিটের ভবন, সেখানকার তামপাত্রা স্বভাবতই আরও দুই-তিন ডিগ্রি বেশি হতে পরে। 

রাজশাহী নগরীর ভদ্রা থেকে পরিবহন মালিক সমিতির অফিস পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কটির দুই ধারে বিশাল আকারের কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি ও শিশুগাছ রয়েছে; যা সড়কটিকে ছায়াবেষ্টন করে রাখে। বিশালাকার এই বৃক্ষগুলোর জন্য তপ্ত এই আবহাওয়ার মাঝেও সড়কটি সবসময় তুলনামূলক ঠান্ডা থাকে। ঠিক বিপরীত চিত্র নগরীর রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের। অর্ধশত কিলোমিটার এই সড়কটি সম্প্রতি প্রশস্ত করা হয়েছে। এ সড়কে রীতিমতো লু হাওয়া বইছে। আর ভদ্রা থেকে পশ্চিমের মাত্র এক কিলোমিটারের সড়কটি এই তপ্ত আবহাওয়াতেও যাত্রীদের ছায়া-শীতলতা ও প্রশান্তি দিয়ে চলেছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন রাস্তার ধার ও ডিভাইডারে বৃক্ষরোপণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাতিম, কাঠবাদাম, কাঠগোলাপ ও পাইনসহ নানা জাতের মাঝারি আকারের ফুলগাছ। রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত পার্কটি সম্প্রতি উন্নয়নের নামে সেখানকার অধিকাংশ পুরোনো ও বিশালাকার বৃক্ষ কেটে উজাড় করা হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি এতে এই এলাকাটি তপ্ত হয়ে উঠেছে। নগরায়নের নামে একের পর এক আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছে গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো। একরের পর একর এসব জমি এখন ফাকা পড়ে রয়েছে। নগরবাসীও তাদের বাড়ির চারধারে যেসব ফাঁকা জায়গা ছিল, তা কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করে ফেলছেন।

এ অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে রিচার্জ হতে পারছে না ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। দুই বছর ধরে রাজশাহীতে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, তা পূর্বের বছরগুলোর চাইতে কম। তার ওপর পদ্মায় পানি না থাকায় রাজশাহীর ভূগর্ভস্থ পানির একটা বড় অংশ ভাটার টানের মতো নদীতে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে রাজশাহীর মাটি। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাজশাহীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্বিগুণ হারে নেমে যাচ্ছে। এমনটা হতে থাকলে ২৫ থেকে ৪০ বছর পর মাটির নিচে আর পানি থাকবে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল এই অঞ্চলের পানির ভবিষ্যৎ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা পৃথিবীর যে নিরক্ষরেখা বরাবর রয়েছে, তাতে এই রেখা বরাবর ভারতের রাজস্থান ও সৌদি আরবের অবস্থান। এপ্রিল থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সূর্য এই নিরক্ষরেখার খুব কাছে অবস্থান করে। যার ফলে এই সময়টাতে এই নিরক্ষরেখা বরাবর অবস্থান করা এলাকাগুলোর ওপর তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়।

এ অবস্থায় অধ্যাপক সারওয়ার বৃক্ষরোপণ ও ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জের পরামর্শ দিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে। 

রাজশাহীর ওপর হওয়া বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজশাহীর আয়তন ২ হাজর ৪০৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০০ সালে ১ হাজার ২২৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে সবুজায়ন ছিল। ২০২০ সালে যা কমে নেমে এসেছে ৯২৬ বর্গকিলোমিটারে। ২০০০ সালে ২৯৮ বর্গকিলোমিটার ছিল বিভিন্ন জলাধার। যা কমে এখন ১৮০ বর্গকিলোমিটারে নেমেছে। ২০০০ সালে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি। 

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণারত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফি বলেন, রাজশাহী জেলা ও মহানগর নিয়ে একাধিক গবেষণা রয়েছে। প্রকৃতি নিজেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেদিন আর দূরে নয়, যেদিন ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃতির আমাদেরকে আর দেওয়ার মতো কিছুই থাকবে না।

এ অবস্থায় রাজশাহী ও এর আশপাশের এলাকার মানুষ তাকিয়ে বৃষ্টির দিকে। এদিকে প্রকৃতিতে এখন কালবৈশাখী মৌসুম চলছে। আমাদের আকাশে কালবৈশাখীর মেঘ তৈরি হয়ে ভেসে আসে ভারতের দিল্লি বা ওই দিক থেকে। তবে এখন পর্যন্ত দিল্লির আকাশে কালবৈশাখীর মেঘ তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে সহসাই রাজশাহী অঞ্চলে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা রাডার দিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। দিল্লির আকাশে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার মেঘ জমে নাই। যার কারণে রাজশাহীতে এই মুহূর্তে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তবে তিনি জানান, এপ্রিলের ২৮ তারিখের পর বা মে মাসের দিকে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা