নিষেধাজ্ঞা অমান্য
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:১৬ পিএম
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৩৩ পিএম
অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী। প্রবা ফটো
তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশের স্কুল-কলেজ সাত দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আফাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দিনে ছাড়াও রাতেও এইচএসসি ব্যাচের ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে গরমে আট শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সাতজন বাড়ি ফিরলেও এখন এক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ক্লাস করতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে।
বিষয়টি জানার পর উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মশিউর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহ বইছে। প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীসহ হিট স্ট্রোকে কয়েকটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ২০ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এক সপ্তাহ ছুটি শেষে আগামী রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খুলছে। কিন্তু সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গাজীপুরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার খবর পাওয়া গেল।
অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে ক্লাস চলছিল। ক্লাস চলাকালীন ছয় শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি গোপন রেখে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের কালিয়াকৈর সদরের রুমাইসা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন। পরে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী সরকারি কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানা যায়।
রাতের এ ঘটনার পর শুক্রবার সকালেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস নেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে ৮টার দিকে আরও দুই শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ সময় তানজিলা নামের এক শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেলেও আফরিন নামের আরেক শিক্ষার্থীকে সেখানে ভর্তি করা হয়।
কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লুৎফর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এই মুহূর্তে একজন ছাত্রী মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।’
চিকিৎসাধীন মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস আফরিন বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে স্কুলের স্যাররা আমাদের ক্লাস করতে বাধ্য করেছে। আমরা যারা ছুটি চেয়েছি, চেয়ারম্যান স্যার বলেছিল অসুস্থ হলেও ছুটি দেওয়া যাবে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আফাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক নৈশপ্রহরী বলেন, ‘রাতে ভেতরে ক্লাস চলছিল। তবে কিছুক্ষণ ক্লাস চলার পর গরমে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে যায়। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. সোহাগ রহমানকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কেন পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে ক্ষেপে যান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেছে। কিন্তু আমরা বাচ্চাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিচ্ছি, তাই তাদের পড়াচ্ছি। যেসব শিক্ষার্থী আবাসিকে থাকে, শুধু তাদের এই ক্লাস করানো হচ্ছে।’
ক্ষিপ্ত হয়ে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আমরা তো চুরি করিনি, আমরা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করিয়েছি। আপনি পারলে রিপোর্ট করে দেন।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির মোল্লার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মশিউর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারপরও আফাজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। আপনার মাধ্যমে শুনতে পেলাম কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’