× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, তীব্র পানি সংকটে শরণখোলা

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৫ পিএম

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:৩৯ পিএম

শরণখোলার সাউথখালীতে শুকিয়ে যাওয়া একটি পুকুর। প্রবা ফটো

শরণখোলার সাউথখালীতে শুকিয়ে যাওয়া একটি পুকুর। প্রবা ফটো

বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার সর্বত্র পানির জন্য হাহাকার চলছে। খাল-বিল, পুকুর-নালা প্রায় শুকিয়ে গেছে। ঘর-গৃহস্থালির কাজ, অজু-গোসল করতে এখন কাদা ও লবণ পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। ফলে সর্বত্র ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফিরোজা আক্তার নামের এক স্কুলশিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। 

রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী আমিরুন্নেছা বেগম জানান, উপজেলা সদরে অবস্থিত জেলা পরিষদের একমাত্র পুকুরের পানি শত শত মানুষ ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এক মাস ধরে পানি শুকিয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এখন পানি তুললে কাদা উঠে আসে। অজু-গোসলসহ ঘর-গৃহস্থালির কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। 

খোন্তাকাটা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ইয়াকুব আলী দফাদার জানান, পানির অভাবে আমাদের এখন মরণদশা। যেভাবেই হোক পাউবোর স্লুইস গেট খুলে পানির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি। বলেশ্বর নদের পানি লবণাক্ত। 

রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন খান বলেন, তাদের এলাকার চিনির খালপাড়, মাছের খালপাড়, সাবারপাড়, বটতলার সকল পুকুর-খাল ও জলাশয় শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই। এলাকাবাসী এখন চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী ধানসাগর ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া থেকে পানি এনে কোনো রকমে চলছে। এ ছাড়া তাদের এলাকায় শিশুরা বেশিরভাগ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে স্যালাইন ও ঔষধ খেয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে তারা। 

উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক রাসেল বয়াতি জানান, তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম চালিতাবুনিয়ায় এখন একটিমাত্র পুকুরে পানি আছে। সাত-আট কিলোমিটার দূর থেকে মানুষ এসে ওই পুকুর থেকে পানি নিচ্ছে। তাফালবাড়ি, সোনাতলা, বকুলতলা, খুড়িয়াখালী ও শরণখোলা গ্রামের মানুষের এখন ওই একটি পুকুরই ভরসা। ভ্যান-রিকশা করে একবার পানি নিতে পাঁচশ টাকা খরচ পড়ছে। সবার পক্ষে ওই টাকা খরচ করে পানি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বকুলতলা গ্রামে পুলিশের দেওয়া একটি পানির প্ল্যান্ট দিয়ে কিছু মানুষ খাবার পানি নিতে পারছে। 

ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু বলেন, তার ইউনিয়নে অধিকাংশ খাল, বিল ও জলাশয় শুকিয়ে গেছে। আমড়াছিয়া এলাকায় দুটি পানির প্ল্যান্ট বসানোর কারণে ওই এলাকায় খাবার পানির কিছুটা লাঘব হলেও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করার মতো কোনো পানি নেই। পাশাপাশি গবাধিপশুর খাওয়ার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। 

রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা জানান, তার ইউনিয়নে তীব্র পানি সংকট চলছে। কোথাও কোনো পানি নেই। পানির জন্য মানুষ হাহাকার করছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ জরুরি ভিত্তিতে পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছেন। এ ছাড়া পুকুর ও খাল খননের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তিনি।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘পানি সংকট ও অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে ১৫ দিন ধরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফিরোজা আক্তার নামে এক স্কুলশিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। তবে বর্তমানে তাদের খাবার স্যালাইনের কোনো সংকট না থাকলেও আইভি স্যালাইনের সংকট রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে আইভি স্যালাইন পাওয়া যাবে।’ 

উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ২৭ এপ্রিল থেকে একটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়া যেসব ন্যানো ফিল্টার ও সোলার ফিল্টারে ত্রুটি রয়েছে, তা দ্রুত মেরামত করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে উপকূলীয় শরণখোলায় পানির স্থায়ী সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন পুকুর ও পুরাতন পুকুর পুনঃখনন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া জনবহুল এলাকায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা