× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মৃতির পাতায় গরিবের ‘এসি বাড়ি’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:১৩ পিএম

বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর এলাকা থেকে ছবিটি এক বছর আগে তোলা হয়েছিল। বর্তমানে মাটির এ বাড়িটি সুদৃশ্য আর নেই। প্রবা ফটো

বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর এলাকা থেকে ছবিটি এক বছর আগে তোলা হয়েছিল। বর্তমানে মাটির এ বাড়িটি সুদৃশ্য আর নেই। প্রবা ফটো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলায় গরিবের ‘এসি বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর। রুচিবোধের পরিবর্তন, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতার কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘরে থাকতে চায় না। বর্তমান বিত্তশালী প্রজন্ম বাপ-দাদার ঐতিহ্য বহনকারী মাটির ঘর ভেঙে লোহা-সিমেন্টের বিলাসবহুল বাড়ি বানাচ্ছে। আর যাদের অর্থবিত্ত একটু কম, তারা টিনের চালা আর বেড়া দিয়ে বানাচ্ছে ঝকঝকে ঘরবাড়ি।

অথচ পাকা ভবন কিংবা টিনের ঘরের তুলনায় মাটির ঘর বেশি আরামদায়ক। শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই এসব ঘরে নিশ্চিত থাকে আরামদায়ক বাসস্থান। কারণ প্রচণ্ড গরমেও ঘরের ভেতর থাকে তুলনামূলক শীতল। আবার তীব্র শীতে মাটির ঘরের ভেতরটা বেশ উষ্ণ থাকে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে আগ্রহী ছিল বেশি। মাটির সহজলভ্যতা, হাতের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ পাওয়া ও শ্রমিক খরচ কম হওয়া ছিল এ আগ্রহের প্রধান কারণ। 

এ জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাটির ঘরের দেখা মিলত। এর ব্যতিক্রম ছিল না সীমান্তঘেঁষা বিজয়নগর উপজেলাও। একসময় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের পাঁচটির প্রতিটি বাড়িতে ছিল মাটির ঘর। প্রায় ৯০ শতাংশ ঘরই ছিল মাটির। কিন্তু সেখানে এখন মাটির ঘরের দেখা মেলাই ভার। ক্রমেই তা স্মৃতির পাতায় উঠে যাচ্ছে।

উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা, মুকুন্দপুর, দাড়িয়াপুর, কামালমুড়া, সেজামুড়া, ভিটি দাউদপুর, ধোরানাল, কচুয়ামুড়া, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, বক্তারমুড়া, ছতরপুর, দুলালপুর, পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর, শ্রীপুর, হরষপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া, পাঁচগাঁও, বাগদিয়া, হরষপুর, সোনামুড়া, নিদারাবাদ, বড়চাল, মেঘশিমুইল, সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মেরাশানী, রানুর বাজার, আলীনগর, কাঞ্চনপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ছিল মাটির ঘর। বর্তমানে ওইসব গ্রামের হাতে গোনা কিছু বাড়িতে মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে দালান ও সেমি-পাকা টিনের ঘর। উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পাওয়া যেত সেসব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর বানাত। 

একসময় মাটির ঘর তৈরি করতেন এমন কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে পাঁক করা হতো। পরে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিবার ১-২ ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করে ৫-৬ দিন রোদে শুকানো হতো। পর্যায়ক্রমে ১০-১২ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো। পরে দেয়ালের ওপর টিন বা ছন দিয়ে চালা (ছাউনি) দেওয়া হতো। 

তারা আরও জানান, প্রতিটি ঘর নির্মাণ করতে সময় লাগত ২-৩ মাস। পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভেতরের দেয়ালে ধানের তুষ (কুঁড়া) দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। বাইরের দিকে দেওয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। চুনের প্রলেপ দিলে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পেত, তেমনি ঝড়বৃষ্টি থেকেও রক্ষা পেত। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতবছর টিকে থাকত। মাটির ঘর নির্মাণের কারিগরদের বলা হতো ‘দেয়ালি’।

মোক্তার মিয়া নামে একজন দেয়ালি জানান, মাটির বাড়ি তৈরি করার উপযুক্ত সময় কার্তিক মাস। কারণ এ সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। প্রতি হাত ৫-৬ হাজার টাকা চুক্তিতেও ঘর নির্মাণ করতেন। মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করে না, যার জন্য এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

সাংবাদিক এসএম টিপু চৌধুরী বলেন, আগে উপজেলার প্রতি বাড়িতেই মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে মাটির ঘরের সংখ্যা খুবই কম। লাল মাটি ও এঁটেল মাটির অভাব, কারিগর সংকটে মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করতে চায় না। এ ছাড়া গ্রামের লোকজন এখন নানা কারণে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। তাদের রুচিবোধেরও পরিবর্তন হচ্ছে। আবার প্রবাসীরা দেশে এসে পরিবারের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যের কথা ভেবে মাটির ঘর ভেঙে পাকা ভবনসহ বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা