প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৫৪ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০৬ পিএম
টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমের তীব্রতায় পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অসহনীয়। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে একের পর এক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। জনগণকে সতর্ক করতে সারা দেশে জারি করা হয়েছে ‘হিট অ্যালার্ট’। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু জীবিকার জন্য যাদের ঘর থেকে বের না হয়ে উপায় নেই- সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় সেই সব নিম্ন আয়ের মানুষ। জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদ উপেক্ষা করেই কাজে নামতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। এদিকে প্রখর রৌদ্রতাপে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকের।
গরম থেকে মুক্তি পেতে বৃষ্টির আশায় কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইস্তিসকার নামাজ (বৃষ্টির প্রত্যাশায় বিশেষ নামাজ) পড়ে দোয়া করছেন মুসল্লিরা। আল্লাহর অনুগ্রহে তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইস্তিসকার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে ইস্তিসকার নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমানের ইমামতিতে পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি এহসানুল হক জিলানী, পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মহিউদ্দিন কাশেমীসহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এ নামাজে অংশ নেন। পরে বৃষ্টি ও গরম থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
ইস্তিসকার নামাজ ও দোয়ায় মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘কুরআন-হাদিস থেকে আমরা জেনেছি, মানুষের সৃষ্ট পাপের কারণেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে বিভিন্ন দুর্যোগ তথা তীব্র গরম, অনাবৃষ্টি ও খরা দেন। বৃষ্টিপাত না হলে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইস্তিসকার নামাজ আদায় করতেন। তারা মহান রবের কাছে নিজেদের পাপের জন্য তওবা করে, মাগফিরাত চেয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন। আমরাও নিজেদের ভুল-ত্রুটির জন্য তওবা করে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য, তীব্র গরমের হাত থেকে মুক্তির জন্য রহমতের বৃষ্টির প্রত্যাশা করে নামাজ আদায় করেছি। আমাদেরকে সকল গুনাহ পরিহার করে মহান আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। তবেই আমরা সফলকাম হতে পারব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রিয় বান্দাহ হতে পারব।’
ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ইস্তিসকা’ শব্দের অর্থ পানির জন্য প্রার্থনা করা। খরা বা দাবদাহের অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আকুতিভরে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হয়। এই নামাজকে ইস্তিসকার নামাজ বলে। পরপর তিন দিন ইস্তিসকার নামাজ পড়া সুন্নত। যদি ইতোমধ্যে বৃষ্টি হয়েও যায়, তবু তিন দিন করা উত্তম। এই তিন দিন নফল রোজা রাখা মুস্তাহাব।
বায়তুল মোকাররম ছাড়াও বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাসাব, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, খিলগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ইস্তিসকার নামাজ আদায়ের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া প্রতিদিনের বাংলাদেশের ব্যুরো অফিস এবং জেলা ও উপজেলা প্রতিবেদকদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাজধানী ছাড়াও ঢাকার সাভার, বরিশাল, রংপুর, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, বাগেরহাট, বান্দরবান, নওগাঁ, নড়াইল, নাটোর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও ছাড়াও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, বরগুনার বেতাগী, পাবনার বেড়া, ভোলার সদর ও চরফ্যাশন, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, দিনাজপুরের সদর, ফুলবাড়ী ও খানসামা, লক্ষ্মীপুরের সদর ও রামগঞ্জ, নোয়াখালীর চাটখিল, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, গাজীপুরের কালিয়াকৈর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং মাগুরার শ্রীপুরে বিপুল সংখ্যক মুসল্লির অংশগ্রহণে ইস্তিসকার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।