× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জব্বারের বলীখেলা

প্রথমবারেই গুরুর মান রাখলেন শিষ্য ‘বাঘা’ শরীফ

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৯ পিএম

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৩৮ এএম

চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ ও  রানার্সআপ রাশেদের লড়াই। ছবি : নিপুন কুমার দে

চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আব্দুল জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসরে চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার বাঘা শরীফ ও রানার্সআপ রাশেদের লড়াই। ছবি : নিপুন কুমার দে

পশ্চিমের আকাশে তখন সূর্য হেলে পড়েছে। ঘণ্টাখানেক আগেও ছিল সূর্যের তীব্র তেজ। সূর্য অস্ত যেতে যেতে তেজ কমতে থাকলেও গোধূলি বেলায় হাজার হাজার মানুষের উল্লাস আর হুংকার উত্তাপ ছড়াচ্ছিল চট্টগ্রামের লালদীঘির পাড়ে। লালদীঘির ময়দান থেকে যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। আশপাশের ভবনের ছাদগুলোতেও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে লালদীঘির পাড়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে ঐতিহাসিক আব্দুল জব্বারের বলীখেলা ঘিরে। হাজারো মানুষের সম্মিল্লিত এই উল্লাসের কেন্দ্রে ছিলেন কুমিল্লার দুই বলী ‘বাঘা’ শরীফ ও মো. রাশেদ।

বন্দরনগরীর ঐতিহাসিক এই বলীখেলার ১১৫তম আসরে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই বাজিমাত করেছেন শরীফ। স্থানীয়দের কাছে যিনি পরিচিত ‘বাঘা’ শরীফ নামে।

বিকাল সাড়ে ৫টায় বলীদের মর্যাদার লড়াই শুরু হয়। প্রায় ১১ মিনিট ধরে চলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই; যেন কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। এক বলীকে কুপোকাত করতে যখন অপরজন শক্ত করে ধরেন, সঙ্গে সঙ্গে উত্তাপ ছড়ায় মঞ্চ ঘিরে থাকা হাজারো দর্শকের শোর-চিৎকারে।

তবে শেষ পর্যন্ত খেলায় নয়; এবারের চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হলো ‘সমঝোতায়’। ১১ মিনিট জমজমাট লড়াইয়ের পর একপর্যায়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাঘা শরীফের হাত উঁচু করে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন প্রতিদ্বন্দ্বী মো. রাশেদ বলী। এর মধ্য দিয়েই ১১৫তম আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন কুমিল্লার হোমনার এই বলী।

শরীফ পেশায় একজন মাংস বিক্রেতা। তাকে জিতিয়ে দিয়ে অন্য রকম এক ত্যাগের নজির স্থাপন করলেন রাশেদ বলী। অবশ্য এই দুই বলী একই গুরুর শিষ্য।

প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির সহসভাপতি সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ বলেন, ‘একজন অন্যজনকে ছেড়ে দিয়ে বিজয়ী করার এমন নজির অতীতে দেখা যায়নি।’

কেন বাঘা শরীফের কাছে নিজ থেকে হার মানলেন? জানতে চাইলে মো. রাশেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কোনো ফলাফল আসছিল না। তা ছাড়া আমি ক্লান্ত ছিলাম। এই বলীখেলায় আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বাঘা শরীফ। শক্তি-সামথে তিনি আমার চেয়ে এগিয়ে। তাই হার মেনে নিয়েছি।’


১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। জানা যায়, বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুবসম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা ও শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই খেলার সূচনা করেন তিনি।

এবারের আসরে ফাইনাল খেলা দুই বলীই কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার বাসিন্দা। এর আগের আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন একই উপজেলার শাহজালাল বলী। সেই শাহজালাল বলীর শিষ্য এই দুই বলী। দুই শিষ্যকে জায়গা করে দিতে এবারের আসরে অংশ নেননি গুরু শাহজালাল। গতবারের রানার্সআপ জীবন বলীও এবারের আসরে অংশ নেননি। যদিও দুজন মাঠে উপস্থিত ছিলেন। গুরু ও গুরুর প্রতিদ্বন্দ্বীর জায়গায় মাঠে নেমেই বাজিমাত করেন দুই শিষ্য। ৮২ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে দুজনই হলেন চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ। তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন খাগড়াছড়ির সৃজন বলী। গতবারও তৃতীয় স্থান দখল করেছিলেন তিনি। চতুর্থ হয়েছেন সীতাকুণ্ডের মো. রাসেল।

এবারের আসরে প্রথম ধাপে ৩৫ জন বলী চ্যাম্পিয়ন হন। তাদের মধ্য থেকে চারজন ও গত আসরের সেরা চারজন খেলোয়ার মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।

৩৫ বছর বলীখেলা পরিচালনা করে গত বছর অবসরে গেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এনায়েতবাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এমএ মালেক। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘আগের আসরের সেরা চার বলী আর এবারের আসরের প্রথম রাউন্ড জয়ী ৩৫ জনের মধ্য থেকে চারজনকে নিয়ে মূল আসর হয়। জয়ীদের মধ্যে কৌশল ও সুঠাম স্বাস্থ্য দেখে বিচারকরাই চারজনকে নির্বাচিত করেন।’

এবারের আসর পরিচালনা করেছেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি হাফিজুর রহমান, চসিকের বক্সিরহাট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন, মো. জাহাঙ্গীর।

অতিরিক্ত গরমের কারণে এবারের আসরে দর্শক সমাগম কম হবে বলে ধারণা করা হলেও দেখা গেল তার উল্টো। প্রতিবারের মতো এবারও কোতোয়ালি মোড় থেকে শুরু করে আন্দরকিল্লা ও লালদীঘি মোড় থেকে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন দেশি ও লোকজ পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছিল মেলা। দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড়ে এসব এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। লালদীঘির ময়দানেও ছিল উপচেপড়া ভিড়।


অন্যান্য সময় মূল মঞ্চের আশপাশে কিছু জায়গা ফাঁকা থাকলেও এবারের মঞ্চের পাশ ঘেঁষে ছিল মানুষের সমাগম। ভিড় সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

মূল মঞ্চের পাশে কথা হয় দুই পোশাকশ্রমিক সুমি আক্তার ও সোহানা বেগমের সঙ্গে। অষ্টাদশী এই দুই তরুণী এসেছেন বায়েজিদ এলাকা থেকে। তারা বলেন, এবারই প্রথম বলী খেলা দেখতে এসেছি। ভিড় ঠেলে মঞ্চের সামনে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তবে খেলা দেখে ভালো লাগছে।

এদিন বিকালে বেলুন উড়িয়ে এবারের আসরের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র আজম নাছির উদ্দিন। খেলা শেষে চ্যাম্পিয়নকে ৩০ হাজার, রানার্সআপকে ২০ হাজার, তৃতীয় বলীকে ১০ হাজার ও চতুর্থ বলীকে ৫ হাজার টাকাসহ ট্রফি তুলে দেন অতিথিরা। পাশাপাশি প্রথম রাউন্ডে বিজয়ী ৩৫ জনের প্রত্যেককে দেওয়া হয় ২ হাজার টাকা করে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা