× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০১ পিএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৫৬ পিএম

কিশোরগঞ্জ শহরে গরমের তীব্রতায় বেড়েছে শরবতের দোকান। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জ শহরে গরমের তীব্রতায় বেড়েছে শরবতের দোকান। প্রবা ফটো

কিশোরগঞ্জে গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছে না সাধারণ মানুষ। স্বস্তি খোঁজার চেষ্টা করছে শহরের ফুটপাথের বিভিন্ন শরবতের দোকানে। গরম থেকে বাঁচতে ও সাময়িক স্বস্তি পেতে স্বল্প আয়ের মানুষ এসব শরবতে ঝুঁকে পড়ছে। ক্ষতিকর নানা উপাদান দিয়ে তৈরি মুখরোচক শরবত যে স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তা বেশিরভাগ মানুষই জানে না। তাই যেখানে-সেখানে গড়ে ওঠা কিংবা ফুটপাথের দোকান থেকে শরবত পানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন তারা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহরের আখড়াবাজার সেতুসংলগ্ন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে আখের রস বিক্রি করছে। মেশিনে আখ পিষে রস বের করে গ্লাস ভরে দিচ্ছে ক্রেতাদের। পরম তৃপ্তি নিয়ে শেষ করছে রস। কেউ নিচ্ছে আরও এক গ্লাস। রসের জন্য দোকানের চারপাশে অপেক্ষা করছেন আরও অনেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ রস বিক্রেতারা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আখের রস বিক্রি করেন। গরমের কারণে রসের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ! যে পরিমাণ আখ নিয়ে আসেন, সব বিক্রি হয়ে যায়। প্রতি গ্লাস আখের রস ২০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।

তীব্র গরমে জনজীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা কিছুটা কমে এলে বাজার-ঘাটে লোকসমাগম বাড়ে। এ সময় পানির চাহিদা পূরণে আখের রস পান করতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। বরফকুঁচি দিয়ে ঠান্ডা আখের রসে প্রশান্তি খোঁজে গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকা সাধারণ মানুষ।

আখের রস বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন ধরে বিক্রি বেড়েছে। তাপমাত্রা বেশি থাকায় আখের রসের চাহিদা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টায় এক থেকে দেড়শ গ্লাস রস বিক্রি হচ্ছে। শ্রমজীবীরা গরমে রস বেশি পান করে থাকেন। অনেকে আবার বোতল করে রস বাড়ি নিয়ে যান। এ ছাড়া গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরবতের চাহিদা বাড়ায় কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন সড়কেও গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। তৃষ্ণা মেটাতে এসব দোকানে বেশি ভিড় করছেন রিকশাচালক, দিনমজুর ও পথচারীরা।

বিক্রেতারা জানান, গত কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ সময় আখের রস, লেবুর শরবতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া রয়েছে ইসবগুলের ভুসি, অরেঞ্জ পাউডার, বেল, পেঁপে, মাল্টা, শাহিদানা ও উলটকম্বলের শরবত। তাপমাত্রা বেশি থাকায় আখের রস বেশি বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ বোতলে ভরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিয়া আক্তার তিন্নি বলেন, গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছি। জ্যামের কারণে রিকশা থেকে হেঁটে এসেছি। হাঁটতে হাঁটতে দুয়েক গ্লাস লেবুর শরবত এবং এক গ্লাস আখের রস পান করেছি। এখন বেলের শরবত পান করছি। রিকশাচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অনেক ঘামছি, গলা শুকিয়ে গেছে। গরমের কারণে সব খেপ নিতে পারছি না। একেকটা খেপ শেষ করে লম্বা সময় বিশ্রাম নিতে হয়। সকাল ৯টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। তখন থেকে এ পর্যন্ত সাত গ্লাস শরবত খেয়েছি। এখনই একসঙ্গে দুই গ্লাস খেলাম। রাত ৯টা পর্যন্ত রিকশা চালাব। ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তো আরও পাঁচ-সাত গ্লাস খাওয়া হবে।’ 

শরবত বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘গরমের সঙ্গে সঙ্গে এখন শরবতের দোকানও বেড়েছে। আগে এই এলাকাতেই দুই-তিনটি দোকান ছিল। এখন অন্তত ১০ থেকে ১২টি দোকান আছে। গরম বাড়ার সঙ্গে মানুষের শরবত পানের চাহিদাও বেড়েছে। তাই দোকানও বেড়েছে। তবে বেচাকেনা কমেনি, বেচাকেনাও বেড়েছে।’

শরবতের দাম ও উপকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে পাঁচ টাকা প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত বিক্রি করেছি। এখন ১৫ টাকা রাখি। সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি জার পানি ৫০ টাকা করে কিনতে হয়। এ ছাড়া বরফ, লেবু, চিনি এসবের দামও আছে। দিনে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার শরবত বিক্রি হয়। ফুটপাথে বসার জন্য চাঁদা ও অন্যান্য খরচ বাদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ থাকে। তবে গতবারের তুলনায় এবার লাভ কম হচ্ছে। কারণ দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।’

ফুটপাথের মুখরোচক শরবতের বিষয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, পথঘাটে খাবার না খাওয়া ভালো। রাস্তার পাশে এসব খাবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত হয়। এগুলো খেলে ডায়রিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়াবে এ ধরনের শরবত বা পানীয়। 

তিনি আরও বলেন, ক্লান্ত হয়ে ফুটপাথের দোকান থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানীয় পান করলেন। কিছুদিন পর হঠাৎ খেয়াল করলেন, আপনার চোখ কিংবা প্রস্রাব হলুদ বর্ণের হয়ে গেল। সঙ্গে তীব্র বমি ও পেটে ব্যথা। এ খাবারগুলোতে বিশুদ্ধ পানিও ব্যবহার করা হয় না। আবার একই গ্লাসে অনেকে পান করেন। সাময়িক তৃপ্তি দিলেও এসব শরবত ও পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা