× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অন্ধকারে সাড়ে ৭ কোটি টাকার আলোর প্রকল্প

শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২২ পিএম

অন্ধকারে সাড়ে ৭ কোটি টাকার আলোর প্রকল্প

সৌরবিদ্যুতের প্যানেল আছে কিন্তু বাতি নেই। কোথাও বাতি থাকলেও প্যানেল গায়েব। অনেক সড়কবাতি ব্যাটারি ও লাইটহীন। ব্যাটারি বাক্সে পাখিরা বেঁধেছে বাসা। অবাধে চুরি হচ্ছে ব্যাটারি ও সোলার প্যানেল। কোথাও আবার স্বজনপ্রীতি করে বিত্তশালীদের আঙিনায় বসানো হয়েছে সৌরবাতি। তিন বছর পর্যন্ত দেখভালের কথা থাকলেও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। বাতিগুলো ১০ বছর আলো দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে সোলারবাতি প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা।

চারঘাট উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ত্রাণ পুনর্বাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় টিআর, কাবিখা এবং বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে সড়কবাতি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

চারঘাট উপজেলার ছয় ইউনিয়নের মসজিদ, মন্দির, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাস্তাঘাট, হাটবাজার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৪৪টি সোলার সিস্টেম প্যানেল ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়। প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টের বরাদ্দ ধরা হয় ৫৬ হাজার ৪৯০ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক ও এসডিআরএস মাঠপর্যায়ে এ কাজ বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি স্ট্রিট লাইট ১০ বছর আলো দেবে এবং বিনা মূল্যে মেরামতের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিন বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি রয়েছে।

কথা ছিল চারঘাট পৌরসভা এলাকায় সূর্যের রশ্মি ও তাপ শুষে নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে সোলার প্যানেল। আর সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র জ্বলে উঠবে সড়কবাতি। ২০২০-২১ অর্থবছরে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ২ কোটি টাকা খরচ করে ১৫৯টি সোলার স্টিক লাইট স্থাপন করেছে চারঘাট পৌরসভা। প্রতিটি সোলার স্টিক লাইটের দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অথচ সন্ধ্যা হলেই চারঘাট পৌরসভাজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জলবায়ু ফান্ডের টাকায় স্থাপনকৃত অধিকাংশ বাতিই অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

সরেজমিনে উপজেলার ঝিকরা-নন্দনগাছী, ফুলতলা-পকেটখালি মোড়, বনকিশোর-পুঠিমারী ও কাঁকড়ামারী-পরানপুর, হলিদাগাছি-বেলঘরায়া সড়কে গিয়ে দেখা যায়, জনশূন্য এসব সড়কের অধিকাংশ সৌরবাতিই জ্বলছে না। শুধু খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাটারি ও লাইট হারিয়ে গেছে। একই অবস্থা উপজেলার ভাটপাড়া, শলুয়া, রাওথা, মনোহরপুর, অনুপামপুর, ফতেপুর, শিবপুর, বালুদিয়াড়, নিমপাড়া, পিরোজপুর, বাসুদেবপুর, জয়পুর, ডাকরা ও রায়পুর বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলোরও।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বিকল হয়ে পড়ে আছে কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পদ। এই বাতির আলোয় মানুষ ও যানবাহন চলাচলে সুবিধা হতো, চুরিসহ সামাজিক অপরাধ দমনে সহায়ক ছিল। সৌরবাতিগুলো অকেজো থাকায় নির্জন সড়ক ও গ্রামীণ বাজারগুলোয় সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। এতে নিত্যই ঘটে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা।

ভাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা কাওসার আলী বলেন, প্রতিদিন দোকানের বেচাকেনা শেষ করে চারঘাট সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নিজ বাড়িতে ফিরি। সৌরবাতি থাকার সময় সড়কগুলো নিরাপদ ছিল। কিন্তু এখন অন্ধকার নির্জন সড়ক পার হতে ভয় হয়। নিম্নমানের হওয়ায় বাতিগুলো স্থাপনের কয়েক মাস পরই অকেজো হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে বলেও কোনো কাজ হয়নি।

উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও বাজারগুলোর সব সৌরবাতি বছরখানেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি বলেছি। এরপরও বাতিগুলো মেরামতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

উপজেলার সরদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু বলেন, ২০১৯-২০ বছরে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করতে দুই বছরের মতো সময় লেগেছে। তাতে সার্ভিস ওয়ারেন্টি এখনও আছে। বাতিগুলো লাগানোর দুই মাস না যেতেই সব অকেজো হয়ে গেছে। তারপর থেকে ঠিকাদারকে আমরা মেরামতের জন্য বলছি, কিন্তু তারা তা করেনি। 

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের চারঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত জহুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সার্ভিস ওয়ারেন্টি ছিল তিন বছর। কাগজে-কলমে সেসময় পার হয়ে গেছে। এখন আমরা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সার্ভিস দিতে পারব।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম শামীম আহম্মেদ বলেন, অনেক সৌরবাতি অকেজো হয়ে গেছে। অভিযোগ পেয়ে সেগুলোর তালিকা তৈরি করে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সৌরবাতিগুলো সচলে উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়ে অভিযোগ থাকায় তাদের জামানতের টাকা এখনও দেওয়া হয়নি।

জানা যায়, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ২০২০ সালে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চারঘাট পৌরবাসী জলাবদ্ধতায় নাকাল থাকলেও এ ফান্ড থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো প্রকল্প না নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে সৌরবাতি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করে। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে সৌরবাতি স্থাপন করে। জলবায়ু ফান্ডের সেই ব্যয়বহুল বাতিগুলো এখন কার্যকারিতা হারিয়েছে।

চারঘাট পৌরসভার পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, সৌরবাতিগুলো প্রথম ছয় মাস ঠিকমতো চলছিল, এরপর থেকে অকেজো। তবে বেশিরভাগ বাতিই প্রভাবশালীদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়ির আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে। 

চারঘাট উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই কোটি টাকা দিয়ে ১৫৯টি সৌরবাতি স্থাপন করে কি এমন জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকিয়েছে পৌরসভা, সেটা বুঝলাম না। বাতিগুলো সচল থাকলেও মানুষ কিছুটা উপকৃত হতো।

চারঘাট পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে সৌরবাতি স্থাপন করে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাতিগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। অনেক বাতি নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেগুলো সচল করার ব্যবস্থা করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা