× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তপ্ত দহনেও জমজমাট জব্বারের বলীখেলা

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫৮ পিএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১৬ পিএম

ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা ও তিন দিনব্যাপী বৈশাখ মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসয়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে। এসব পণ্য কিনতে ভিড় করছে নগরবাসী। বুধবার বিকালে তোলা। ছবি : নিপুল কুমার দে

ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা ও তিন দিনব্যাপী বৈশাখ মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসয়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে। এসব পণ্য কিনতে ভিড় করছে নগরবাসী। বুধবার বিকালে তোলা। ছবি : নিপুল কুমার দে

বৈশাখের তপ্ত দহনে চারদিকে হাঁসফাঁস অবস্থা। সূর্যের তেজরশ্মিতে গলে পড়ছে সড়কের বিটুমিন। মাথার ওপর প্রখর রোদ, পায়ের নিচে উত্তপ্ত সড়ক। সব মিলিয়ে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। কিন্তু এমন তপ্ত দহনও ম্লান করতে পারেনি মেলার আমেজ। গতকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে আবদুল জব্বারের বলীখেলা। চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের সেই মেলাপ্রাঙ্গণে ঘুরতে ঘুরতে মনে হলো, উৎসবের আমেজে যেন কিছুটা হলেও কমে এসেছে প্রখর সূর্যালোক। 

১১৫ বছর আগে শুরু হয় এই মেলা। আর এখন তা শুধু চট্টগ্রামের নয়, পুরো বাংলাদেশেরই মেলা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা নানান পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন লালদীঘির মাঠ ঘিরে। এক বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে এই মেলার কার্যক্রম অবশ্য শুরু হয়েছে দুই-তিন দিন আগে থেকেই। গতকাল ঘটল আনুষ্ঠানিক যাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার লালদীঘি মাঠে এ খেলায় অংশ নেবেন শতাধিক বলী। 

অনেকে ভেবেছিলেন, তাপপ্রবাহের কারণে এবার মেলায় ক্রেতাদের ভিড় কম হবে। কিন্তু ক্রেতারাও যেন দাবদাহ উপেক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তাই পুরো মেলাজুড়েই দেখা গেল ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়বাট্টা। 

আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলা ও মেলার জন্য চট্টগ্রামের মানুষ অপেক্ষা করে বছরজুড়ে। কারণ এ মেলায় এমন সব পণ্যও পাওয়া যায়, যা চট্টগ্রামে সাধারণত সারা বছরেও আর পাওয়া যায় না। মেলায় তেমন পণ্যের সন্ধানে গতকাল এসেছিলেন পটিয়ার হাবিলাস দ্বীপের বাসিন্দা রোখসানা আক্তার। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় লালদীঘির পাড়ে কথা হলো তার সঙ্গে। বললেন, ‘এ মেলায় প্রতি বছরই আসি। গরমের কারণে এবার সন্ধ্যার পর আসব ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, সন্ধ্যায় এলে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যাবে। তাই কষ্ট হলেও দিনেই চলে এলাম। গৃহস্থালির কিছু পণ্য লাগবে। কিনেই ফিরে যাব।’ 

মেলা ঘুরে দেখা গেল, শিশুদের খেলনা, গৃহসজ্জার নানা জিনিসপত্র, মাটির থালা-বাসন থেকে শুরু করে হরেক রকমের মৃৎশিল্পের উপকরণ, শীতলপাটি, হাতপাখা, ঝাড়ু, দা-খুন্তিসহ সবই আছে মেলায়। এসবের মধ্যে সিলেটের শীতলপাটির চাহিদা চট্টগ্রামের মানুষের কাছে বেশি। শীতলপাটির পসরাকে ঘিরে দাঁড়ানো কয়েকজন ক্রেতার কাছে সমানে দর হাঁকাচ্ছিলেন বিক্রেতা রফিক মুন্সি। বললেন, ‘২৩ বছর ধরে এই মেলায় শীতলপাটি বিক্রি করি। এক মেলায় খারাপ পাটি দিলে পরের মেলায় ক্রেতা আমাকে ধরবেÑ এটা আমি বুঝি। তাই ভালো মানের শীতলপাটি নিয়ে আসি।’ দামের ব্যাপারে বললেন, ‘একটি শীতলপাটি তো ছয়-সাত হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আমি তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করছি।’

বিকালের দিকে ভিড় কিছুটা বাড়লেও আগের বছরের চেয়ে ক্রেতা কম বলে মনে করছেন ঢাকার ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ। তিনি বললেন, ‘গৃহসজ্জার সরঞ্জাম নিয়ে এসেছি। পণ্যের কোনো অভাব নেই। কিন্তু আগের বছরের মতো লোকজন নেই। গরমের কারণে এটা হয়েছে। আশা করি, রাতে ক্রেতা আরও বাড়বে।’ 

রাঙামাটি থেকে ফুলের ঝাড়ু নিয়ে এসেছেন হেদায়েত আলী। তিনি বললেন, ‘পাহাড়েও গরম। এখানেও গরম। মানুষ তো বের হতেই পারছে না। তারপরও আশা করছি, ফুলের ঝাড়ু বিক্রি হয়ে যাবে।’ শিশুদের জন্য নানা ধরনের খেলনা নিয়ে এসেছেন ঢাকার ব্যবসায়ী বিপ্লব হাওলাদার। বললেন, ‘আমিসহ ৮ জন কর্মী আছি। ট্রাক ভর্তি করে মালামাল নিয়ে এসেছি। গরম যতই থাক, আশা করছি, ভালো বিক্রি হবে।’ তিনি বলেন, ‘ভিড় হলে অভিভাবকরা শিশু নিয়ে কমই আসেন। তবে শিশুরা এলে তাদের খেলনা বিক্রি বাড়ে।’ 

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা শুরুর ইতিহাস গৌরবময়। ব্রিটিশ শাসনামলে বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার বনেদি ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ১৯০৯ সালের ১২ বৈশাখ নিজের নামে লালদীঘি মাঠে বলীখেলা শুরু করেন। পরে এই বলীখেলা ও মেলা বাঙালি ও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে পরিণত হয়। এবার ১১৫তম বলীখেলার আসর বসছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা