× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টানা দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত, বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায়

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১৫ এএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৫ পিএম

বৃষ্টির প্রত্যাশায় প্রখর রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বিশেষ নামাজ শেষে প্রার্থনা করে মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনার বেতাগী পৌরশহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ থেকে তোলা। প্রবা ফটো

বৃষ্টির প্রত্যাশায় প্রখর রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বিশেষ নামাজ শেষে প্রার্থনা করে মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনার বেতাগী পৌরশহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ থেকে তোলা। প্রবা ফটো

দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে টানা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ ও বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। মানুষ হাঁসফাঁস করছে। প্রাণ ওষ্ঠাগত। প্রকৃতির গরম বাতাসে মার খাচ্ছে কৃষি ও কৃষক। মাঠ ফেটে চৌচির। ভাটা পড়েছে শিক্ষায়। বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।

এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের আয়-রোজগার বন্ধের উপক্রম। প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছে না। রোদের তীব্রতায় অল্পতেই হয়রান হয়ে যাচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকলেও খুব ঘামাতে দেখা যাচ্ছে। শিশুরা গরমের তীব্রতায় দীর্ঘ সময় ধরে পুকুরে নেমে ঝাঁপাঝাঁপি করছে। খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে উপজেলাজুড়ে নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির প্রত্যাশায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে। নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজেদের পাপের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা চেয়ে অঝোরে কেঁদেছে ইমাম ও মুসল্লিরা।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টায় বেতাগী পৌরশহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করে স্থানীয়রা। এতে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ধর্মীয় নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, কৃষক, দিনমজুরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।

‘আল্লাহর শরণাপন্ন হলে তিনি বিপদাপদ, দুঃখকষ্ট, বালামুসিবত অবশ্যই দূর করে দেন। দুনিয়ায় আল্লাহর অজস্র কুদরত ও নিদর্শনের মধ্যে বৃষ্টি অন্যতম। বৃষ্টি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। বৃষ্টি আল্লাহর খাস রহমতের নিদর্শন।’ তাই বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ হয় বলে জানান আয়োজকরা। নামাজে ইমামতি ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বরগুনার গুদীকাটা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইয়াকুব।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নানা বয়সি মানুষ নামাজের জন্য মাঠে হাজির হয়েছে। ইমাম প্রথমে মুসল্লিদের উদ্দেশে নামাজের নিয়মকানুন বলেন। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সবাই। নামাজ শেষে দুই হাত তুলে প্রচণ্ড গরম, তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরা থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি চেয়ে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে তারা।

বেতাগী মডেল মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘কুরআন-হাদিসের আলোকে যতটুকু জানা গেছে, মানুষের সৃষ্ট কোনো পাপের কারণে আল্লাহ এমন অনাবৃষ্টি ও খরা দেন। বৃষ্টি না হলে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে খোলা ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করতেন। এ আলোকেই আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তওবা করে ও ক্ষমা চেয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছি।’

স্থানীয়রা জানায়, এ এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। নদীনালা, পুকুর শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না অগভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পেও। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ রোদে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে তারা বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছে। নামাজে সবাইকে অংশ নেওয়ার জন্য আগে থেকেই মাইকে প্রচার করা হয়েছিল।

সেখানে উপস্থিত স্থানীয় কৃষক ফরিদ হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টিবাদল নেই। খুব তাপ। এত তাপ যা আগে দেখেনি কেউ। কলে পানি উঠছে না। মাঠের ক্ষেতখোলা নষ্ট হচ্ছে। তাই বৃষ্টি চেয়ে নামাজের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে সবাই দোয়া করেছে।’

বেতাগী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কামরুল হাসান জানান, এবারে বেশ কিছু পরিমাণ জমিতে করলার আবাদ করেছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড খরতাপে সবজি গাছগুলো হলদে বর্ণের হয়ে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন লাভ দূরে থাক, খরচ না ওঠায় চরম লোকসান ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। অন্য সবজিতেও একই অবস্থা; যা পুষিয়ে ওঠার নয়।

বেতাগী পৌর এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর নান্টু মিয়া বলেন, ‘এর আগে আমার জীবনে এত গরম দেখিনি। মানুষ রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারছে না। গরমে কাজকাম করতে কষ্ট।’ তাই বৃষ্টির আশায় দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করেছেন খোলা মাঠে।

সবজি বিক্রেতা মো. দুলাল মিয়া বলেন, ‘তীব্র তাপে বিপাকে পড়েছি আমরা নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। রাস্তাঘাটে মানুষ নেই। আমাদের আয়-রোজগার এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে।’

ভ্যানচালক রস্তুম হাওলাদার বলেন, ‘এ মৌসুমে গরম পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু যেভাবে গরমের তীব্রতা তা অতিমাত্রার ও অস্বাভাবিক। এতে আমরা কাজ করতে পারি না। মানুষ তেমন ঘর থেকে বের হয় না। কাস্টমার পাই না। চরম কষ্টে যাচ্ছে দিন।’

প্রচণ্ড গরমে অস্বস্তিতে এখানকার শিশু ও শিক্ষার্থীরাও। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও প্রশান্তি নেই। খুদে শিক্ষার্থী সুমাইয়া বেগম বলে, ‘স্কুল বন্ধ, তার পরও গরমের হাত থেকে নিস্তার নেই। ঘরে থাকা যাচ্ছে না। পাচ্ছি না কোনো ধরনের প্রশান্তি। হাঁপিয়ে উঠছি, কষ্ট হয় শ্বাস নিতেও।’

বেতাগী উপজেলা কৃষি অফিসার তানজিলা আহম্মেদ বলেন, ‘তীব্র গরমে সবজি, বোরো ধান, আউশের বীজতলা, আমের গুটি, কাঁঠাল, লিচু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ যে গরম দিয়েছেন তা আল্লাহ বৃষ্টি দিয়ে কমিয়ে না দিলে ফসল নষ্ট হবেই। তবু তাপপ্রবাহ থেকে ফসল রক্ষায় সবজি-ফসলি জমিতে বিকালে মাটি ও ফসলের ধরন বুঝে সেচের ব্যবস্থা করতে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

বেতাগী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গরমে মানুষের মতো কাহিল এখানকার প্রাণিকুলও। খাবার গ্রহণে অনীহার পাশাপাশি তাদের আচরণগত পরিবর্তনও দেখা দিয়েছে। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। এমনকি গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি মারাও যাচ্ছে। তাই শারীরিকভাবে দুর্বল প্রাণীগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।’

বেতাগী ছালেহিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালাসহ সবাই খুব কষ্টে আছে। তাই এজন্য বৃষ্টির আশায় নামাজ পড়েছি।’

বরিশাল আবহাওয়া অফিস জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। আপাতত বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যেতে পারে।

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘এখানে গরমের কারণে মৌসুমি রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এর মধ্যে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বরে ভুগছে বেশির ভাগ লোক। জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা বেশি আসছে। ইতোমধ্যে ডায়রিয়ায় ৫০০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনও ডায়রিয়া রোগী আসছে। আসলে মানুষ অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি খাচ্ছে। রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে মহামারি আকারে ধারণ করতে পারে। ফলে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও চালাচ্ছি।’

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফারুক আহমদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখানে রোদ-গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। এ অবস্থায় জনসাধারণকে সচেতন করতে আমরা কাজ করছি। পথচারী ও এলাকাবাসী যাতে সতর্ক থাকে এবং খুব প্রয়োজন ছাড়া লোকজন যেন এ রোদে ঘর থেকে বের না হয় এবং প্রচুর পানি পান করে এসব বিষয়ে সমাজমাধ্যমে সতর্ক করা হচ্ছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা