কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২২ এএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫১ এএম
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টাগবোটে করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে তুলে দেওয়া হয় গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমারের জাহাজে। প্রবা ফটো
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের জেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দেশটির সেনা ও বিজিপির ২৮৮ সদস্যকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের ঘণ্টাব্যাপী উপস্থিতিতে ইমিগ্রেশন ও যাচাইবাছাই কার্যক্রম শেষে কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে তাদের হস্তান্তর করা হয়। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টাগবোটে করে তাদের তুলে দেওয়া হয় গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমারের জাহাজে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়াস্থ ঘাট। কঠোর নিরাপত্তা বলয়। চারদিকে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের অবস্থান। ঘিরে ফেলা হয়েছে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের পুরো এলাকাটি। ভোর সাড়ে ৪টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আসা একে একে ১১টি বাস ভোর সাড়ে ৫টায় পৌঁছায় নুনিয়াছড়া প্রত্যাবাসন ঘাটে। তারপর মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপির ২৮৮ সদস্যের শুরু হয় যাচাইবাছাই কার্যক্রম।
এরই মধ্যে ঘাটে উপস্থিত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। চলে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বৈঠক। যেখানে অংশ নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত ও বিজিপির পাঁচ সদস্য আর বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। ঘণ্টাব্যাপী যাচাইবাছাই কার্যক্রম শেষে সকাল ৭টায় দ্রুত মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্যদের তুলে দেওয়া হয় টাগবোটে। এর পরই টাগবোটটি রওনা হয় গভীর সাগরে। আর টাগবোটটির সামনে ও পেছনে কঠোর নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় কোস্টগার্ড। পরে তাদের তুলে দেওয়া হয় সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমারের জাহাজে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, প্রথম দফায় ১৫ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার ইনানীস্থ নৌবাহিনীর জেটি থেকে মিয়ানমারের সেনা, বিজিপি, কাস্টমস কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জনকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর গত দেড় মাসে নতুন করে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সেনা-বিজিপির আরও ২৮৮ জন। তাদের নানা প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর তাদের গভীর সাগরে মিয়ানমারের জাহাজে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন স্বদেশে ফিরে যাচ্ছে।
এদিকে পুরো কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েসহ প্রতিনিধি দলকে বিদায় জানান বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বা বিজিবির কোনো কর্মকর্তাই গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে বুধবার দুপুরে মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে দেশটির জাহাজে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশের ১৭৩ নাগরিক। এর মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজারের, ৩০ জন বান্দরবানের, সাতজন রাঙামাটির এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারীর একজন করে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া ২৮৮ জন গত ১ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্য়ন্ত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল আরও ৩৩০ জন। যাদের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
চলতি বছরের গত তিন মাসে মিয়ানমারের সেনা-বিজিপির ৬১৮ জনকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় এবং প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।