দুই ভাইকে হত্যা
ফরিদপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩২ পিএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩৫ পিএম
দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মধুখালীতে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলাটিতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: ফোকাস বাংলা
ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরের প্রতিমায় আগুন দেওয়ার সন্দেহে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এরই জেরে মঙ্গলবার মধুখালীতে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সঙ্গে দিনভর সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সহোদর দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এদিন ‘সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলাটিতে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, এ ঘটনায় আগে থেকেই তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল। পরিস্থিতি শান্ত হলে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় আবার চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে এবং প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে।
এদিকে মঙ্গলবার মধুখালীতে পুলিশের ওপর হামলা সরকারি সম্পদ বিনষ্ট ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মধুখালী থানায় মামলা করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালী মন্দিরে আগুন লাগে। এসময় পাশেই পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাতজন শ্রমিক টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন। তারাই মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করেছেন— এমন সন্দেহের জেরে পঞ্চপল্লীর একদল বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এসময় শ্রমিকেরা প্রাণ বাঁচাতে স্কুলের একটি কক্ষে আশ্রয় নিলে সেখানে ঢুকে তাদের বেধড়ক পেটানো হয় এবং অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
পরে পুলিশ এসে তাদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আশরাফুল ও তার ছোট ভাই আরসাদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা হল উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে।
এ ঘটনায় তিনটি মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এসপি।
এ ঘটনার জেরে দুই ভাইকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার চেয়ে মঙ্গলবার সকালে মধুখালী উপজেলা সদরের রেলগেট এলাকার ঈদগাহ মাঠে ‘সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়। এতে শত শত মানুষ অংশ নেন। একপর্যায়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
এসময় মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তখন হিমশিম খায় প্রশাসন। দুপুরের দিকে সেখানে ছুটে যান জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। কিন্তু তাদের কথা না শোনেননি উত্তেজিত জনতা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছররা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিকেল ৪টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশের ছোড়া গুলি ও টিয়ার শেলে অন্তত ১৪ বিক্ষোভকারী আহত হন। সংঘর্ষে আহত হন কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবারের সহিংসতার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’