তীব্র তাপপ্রবাহ
মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৪৪ পিএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪২ পিএম
হাসপাতালের বেডে জায়গা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকে। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জে দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র তাপপ্রবাহে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের সংখ্যা। ঠান্ডা জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পানিশূন্যতা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনের মতো শিশু ভর্তি হচ্ছে। অপরদিকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দুপুরে হাসপাতাল দুটিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, রোগীরা বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছে। এ সময় কথা হয় কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জুয়েলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ’রবিবার থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। বাসায় স্যালাইন খেয়েছি। তবে সোমবার সকালে হঠাৎ করে শরীর বেশি খারাপ হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসকরা স্যালাইন দেওয়ায় এখন কিছুটা সুস্থ অনুভব করছি।‘
সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শনিবার দুই বছরের মেয়ে জুই আক্তারকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের মো. দুলাল মিয়া ও সালমা আক্তার দম্পত্তি। সালমা বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে সেবা পেলেও অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে মেঝেতে শুয়ে সেবা নিতে হচ্ছে।‘
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলার ১৪টি সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৯৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০ জন, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৪৫ জন এবং জেলার অন্যান্য হাসপাতালে ২০ জন ভর্তি আছে।
দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতেও নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা দিতে ডাক্তার-নার্স নিয়োজিত আছেন। বেডের সমস্যা থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট নেই।’
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সবগুলো হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে তৈরি রাখা হয়েছে। চিকিৎসাসেবার কোনো ত্রুটি নেই। তবে রোগীর চাপ বাড়ছে। ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব এখনও তেমনভাবে দেখা দেয়নি। জেলায় এখনও ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন ডায়রিয়ার ৯৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে কলেরা স্যালাইন, খাবার স্যালাইন ও অন্য প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।’