ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৩ পিএম
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়নের সবুজ তজুর বানানো ভাস্কর্য। প্রবা ফটো
নাম তার সবুজ তজু। পেশায় দিনমজুর হলেও তার শখ কাঠ খোদাই করে ভাস্কর্য গড়া। বলা যায় এটি তার নেশা। হাতুড়ি-বাটালের সাহায্যে প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি কাঠের মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্য তৈরি করে চলেছেন। বন থেকে গাছের অংশবিশেষ সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে চা বাগানের শৈল্পিক রূপ, চা-কন্যা, বিভিন্ন প্রাণী ও ধর্মের প্রায় পাঁচ শতাধিক ভাস্কর্য। এর অধিকাংশই বিক্রি করেছেন স্বল্প মূল্যে।
সবুজ তজুর আবাস মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়নের দ্য কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের হরিণছড়া চা বাগানে। মূল বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায়। বাবা হরিণছড়া চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন। সেই সূত্রেই মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নিভৃত চা বাগান হরিণছড়ায় আসেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক সবুজের ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিনই তার ছোট কুটিরে ভিড় জমান দেশ-বিদেশের পর্যটক ও শৈল্পিক মানসিকতার লোকজন। কেউ কেউ নিজগৃহের সৌন্দর্য বর্ধনে অল্পমূল্যে কিনে নেন তার ভাস্কর্য।
চা বাগানে বসবাসরত সবুজ ছোটবেলা থেকেই বাঁশ-বেতের শিল্পসামগ্রী তৈরি করেন। সেই সঙ্গে চলে রঙ আর পেনসিলে আঁকাআঁকি। নিজ চেষ্টা আর একাগ্রতায় রপ্ত করেন ভাস্কর্য তৈরির পারদর্শিতা। সংসারের টানাপড়েনে সবুজ স্থানীয় এক লেবু বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কাজ থেকে ফিরে বসে পড়েন ভাস্কর্য তৈরিতে। ২০২২ সাল পর্যন্ত সবুজের বসবাস ছিল নড়বড়ে ছন-বাঁশের ঘরে। ওই সময়ে সবুজ উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম জাবেদকে অনুরোধ করেন একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে। জাবেদের মাধ্যমে তার আকুতি পৌঁছায় তৎকালীন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুনের কাছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সবুজ তজুকে একটি ঘর উপহার দেন। সেই সঙ্গে উপহার দেন প্রধানমন্ত্রীর একটি ছবি। এ ছবি দেখেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সবুজ তৈরি করেন প্রধানমন্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল মনোমুগ্ধকর ৪৩ ইঞ্চি উচ্চতার একটি ভাস্কর্য। নিজ হাতে প্রধানমন্ত্রীকে এই ভাস্কর্য উপহার দেওয়ার ইচ্ছা তার।
সবুজ তজুর ভাস্কর্য নিয়ে পর্যটনবিষয়ক লেখক শ্যামল দেববর্মা বলেন, ‘দারুশিল্পী সবুজ তজুর বানানো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ নানা ধরনের ছোট-বড় ভাস্কর্য খুব ভালো লেগেছে। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে তার কাঠ খোদাই করা ভাস্কর্যে।’
সবুজ তজুর ছেলে সুমন রিচিল বলেন, ‘আমি পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার কাছ থেকে ভাস্কর্য তৈরির কাজ শিখছি। প্রধানমন্ত্রীর যে ভাস্কর্য বানিয়েছেন এটি বানাতে বাবাকে সাহায্য করেছি। আমাদের আশা প্রশাসনের সাহায্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাস্কর্য তার হাতে তুলে দিতে পারব।’
ভাস্কর সবুজ তজু বলেন, ‘আমি গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে কাঠ খোদাই করে ভাস্কর্য তৈরি করছি। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাধাকৃষ্ণ, আদিবাসীদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আমাদের খ্রিস্টান ধর্মীয় যিশু, মা মারিয়া, চা-কন্যা, ধান কাটা, মাছ শিকারি, আদিবাসী শিকারি তথা সাঁওতাল, ওঁরাও, বিভিন্ন প্রাণী- এগুলো তৈরি করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি ঘর উপহার দিয়েছেন, এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর দুটি ভাস্কর্য তৈরি করেছি। সুযোগ পেলে ভাস্কর্য দুটি তার হাতে তুলে দিতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব।’