× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খালের দুরবস্থায় আবাদে দুরাশা

মো. রফিকুল ইসলাম, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১৬ পিএম

 পাবনা সেচ ও পল্লী প্রকল্পের আওতাধীন সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডরিয়া গ্রামে পানিশূন্য সেচ খাল। প্রবা ফটো

পাবনা সেচ ও পল্লী প্রকল্পের আওতাধীন সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডরিয়া গ্রামে পানিশূন্য সেচ খাল। প্রবা ফটো

পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (আইআরডি) রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে অকার্যকর হতে বসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভেস্তে যাচ্ছে প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এতে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেচ প্রকল্পের পানি পেলে কৃষকদের সারা বছরে তিনটি ফসলে প্রতি বিঘায় পাউবোকে মাত্র ১৮০ টাকা চার্জ দিতে হয়। অথচ সেচের পানি না পাওয়ায় শুধু বোরো আবাদেই একজন কৃষকের প্রতি বিঘায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

পাউবো বেড়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে ৩৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনা সেচ প্রকল্প চালু হয়। এজন্য বেড়া উপজেলার বৃশালিখায় হুরাসাগর নদের পাড়ে পানি তোলার জন্য ও কৈটোলায় যমুনা নদীর পাড়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয় শক্তিশালী দুটি পাম্প স্টেশন। এ ছাড়া খনন করা হয় ছোট-বড় অসংখ্য সেচ খাল, নিষ্কাশন খাল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, জলকপাট (স্লুইসগেট), কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৪২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রধান সেচ খাল ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯টি অপ্রধান, ৪৭টি শাখা এবং ৪ শতাধিক ছোট সেচ খাল খনন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে পাবনার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে প্রকল্পটি। এখন দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে।

ফলে বোরো মৌসুমে প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার হাজার হাজার কৃষককে গভীর-অগভীর নলকূপ (ডিপ কল) বসিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদন খরচ যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। নিয়মিত ও যথাযথভাবে সংস্কার না করায় বহু সেচ খালে ঠিকমতো পানিই পৌঁছে না বলে জানান কৃষকরা। আবার বেশ কিছু সেচ খাল অব্যবহৃত থাকায় ভরাট হয়ে মাটির সঙ্গে মিছে গেছে। এগুলোর এখন আর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কথা ছিল বছর বছর সেচ প্রদানের এলাকা বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো কমতে থাকে সেচের জমি। অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় গত ৩২ বছরে সেচ খাল ও এর অন্যান্য অবকাঠামো দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়তে থাকে। ছোট সেচ খালগুলো (টার্শিয়ারি খাল) ভরাট হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে। কোনো কোনোটি আবার মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে অস্তিত্বই হারিয়ে ফেলেছে। কোথাও কোথাও এসব সেচ খাল দখল করে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটও তৈরি হয়ে যায়। বহু খাল অকার্যকর হওয়ায় মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। 

তবে পাউবো জানিয়েছে, চলতি বছর ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবোর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যে সেচ খালগুলো রয়েছে তা দিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না। 

সরেজমিনে সাঁথিয়ার পুণ্ডরিয়া, শামুকজানি, বায়া, পানিশাইল, বেয়াইলমারী, গাগড়াখালি, ছেচানিয়া, বড়গ্রাম, বেড়া উপজেলার চাকলা, দমদমা, খাকছাড়া, মোহনগঞ্জ, হরিরামপুর, নতুন পেঁচাকোলা, মাছখালিসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমির পাশ দিয়ে যাওয়া সেচ খালগুলোতে পানি নেই। দেখে মনে হয় না এগুলো সেচ খাল। অনেক স্থানে সেচ খাল মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। 

পুণ্ডরিয়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী, আব্দুল মালেক, আনছার আলী, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল মুন্নাফসহ কয়েকজন জানান, একসময় এ এলাকার কৃষকরা সেচ খালের পানি দিয়ে সব ধরনের ফসল আবাদ করতেন। এতে তাদের নামমাত্র খরচ হতো। ১০ বছর ধরে পানি না আসায় সবাই সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিচ্ছেন। এতে খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে।

সম্প্রতি বেড়া উপজেলার দমদমা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ডি-৫ সেচ খালে ১৫ বছর ধরে পানি না আসায় বিলীন হওয়ার পথে। সেচ খালের পাশেই জায়গা রয়েছে গ্রামের আলহাজ হোসেনের। সেচ খাল ও তার নিজের জায়গায় মাটি ফেলে ভরাট করে ঘর তুলেছেন তিনি। আলহাজ হোসেন জানান, ১৫ বছর ধরে এই সেচ খালে পানি আসে না। খালটি মাটিতে মিশে যেতে বসেছে। রাস্তার সঙ্গে খাল ও এর পরই তার জায়গা। তাই তিনি সেখানে মাটি ফেলে বাড়ি করছেন। ভবিষ্যতে খাল চালু হলে মাটি সরিয়ে নেবেন বলেও জানান।

জানতে চাইলে পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের (আইআরডি) অবকাঠামোগুলোর উন্নয়ন এবং সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যেই একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে বন্ধ সেচ খালগুলো যেমন পুনরুজ্জীবিত হবে, তেমনি নতুন নতুন এলাকায় সেচ খালও নির্মাণ করা হবে। এটা চালু হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তখন ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। এরই মধ্যে অনেকগুলো খাল সংস্কার করে সেচের আওতা বাড়ানো হয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা