মধ্যাঞ্চলীয় অফিস
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২৬ এএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫৬ এএম
কিশোরগঞ্জে নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতা মুখলেছ ভূঁইয়ার লাশ উদ্ধার করার সময় স্থানীয়দের ভিড়। প্রবা ফটো
কিশোরগঞ্জে নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতা মুখলেছ ভূঁইয়ার লাশ ২৫ দিন পর মাথাবিহীন ও গলিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ সংলগ্ন নরসুন্দা নদী থেকে গ্রেপ্তার আসামি মিজান শেখের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে মুখলেছের পরিহিত লুঙ্গি, বাসার চাবি ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত মাথা পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকালে আসামি মিজানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদলের সহায়তায় দুই দিন ধরে নরসুন্দা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ওইদিন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল বিকালে নদীতে থাকা কচুরিপানার ভেতর থেকে শরীরে সিমেন্টের ব্লক বাঁধা অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতার লাশ পাওয়া যায়। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, মো. মুখলেছ উদ্দিন কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের কেওয়ারজুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি একই ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে সম্প্রতি বাংলা বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করে জেলা আদালতের আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ শিখছিলেন।
মুখলেছ উদ্দিনের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমার ভাই কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া বউবাজার এলাকার চুন্নু মিয়ার বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। ২৯ মার্চ ভাড়া বাসা থেকে আনুমানিক রাত ৯টার দিকে নিখোজ হয়। তার সর্বশেষ অবস্থান রাস্তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে শনাক্ত হয়। ততে তার সঙ্গে কয়েকজনকে দেখা যায়।’ তার ধারণা, তারাই তাকে অপহরণ করে মেরে ফেলেছেন। পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের সূত্র ধরে পুলিশ মিঠামইনের কেওয়ারজুর ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের শেফুল শেখ (৬৫), তার তিন ছেলে মিজান শেখ (২৮), মারজান শেখ (২৬) ও রায়হান শেখকে (২১) হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শনিবার (২০ এপ্রিল) ১১টার দিকে গ্রেপ্তার করে।
মিজানুর বলেন, ‘আমরা এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। মুখলেছ যে বাসায় থাকত তার কাছাকাছি একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফুটেজে দেখা গেছে ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪৪ মিনিটে মুখলেছ হেঁটে বাসায় ফিরছে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পেছন থেকে হেঁটে আসছে একই গ্রামের মিজান। অথচ মিজান হারুয়ায় থাকে না। কিছুদিন আগে ওই যুবকের (মিজান) গোষ্ঠীর সঙ্গে মুখলেছ গোষ্ঠীর মারামারি হয়। এজন্য ধারণা করি, মিজানই মুখলেছের অপহরণে জড়িত।’
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, সোমবার থেকে উদ্ধার অভিযান চলছিল। মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মুখলেছকে হত্যা করে শরীরে ব্লক বেঁধে ব্রিজের নিচে নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেন আসামিরা। মুখলেছ নিখোঁজ হওয়ার পর ৩১ মার্চ থানায় জিডি এবং ১৬ এপ্রিল অপহরণ মামলা করা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২০ এপ্রিল সিলেট থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে ছুরি দিয়ে জবাই করা হয়েছে সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লাশ বিকৃত হয়ে যাওয়ায় অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) পরীক্ষা করা হবে। আটকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি জানান।