ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:২১ পিএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৩৭ এএম
প্রতীকী ফটো
নির্মাণ শ্রমিক মজিবর রহমান। ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে যোগানদাতা হিসেবে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পান। ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা ইউনিয়নের টাংগাটি গ্রামে। এলাকায় এসে পায়ের ড্রেসিং করানোর জন্য গোয়াতলা বাজারের পল্লী চিকিৎসক শফিকুল ইসলামের কাছে পরামর্শ চান।
এরপরই শুরু হয় শফিকুল ইসলামের কেরামতি! প্রথম দিনেই ড্রেসিং ও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট, মলম এবং ব্যাথার ইনজেকশন দিয়ে পায়ের গোড়ালির ক্ষত অংশে ড্রেসিংয়ের নামে শুরু হয় কাটাছেঁড়া। কাটাছেঁড়া করার সময় রোগীর চিৎকারে আশেপাশের দোকানের লোকজন এসে ভিড় জমায়। চিকিৎসা শেষে বিল ধরিয়ে দেন সাড়ে তিন হাজার টাকা। দুইদিন পরপর ড্রেসিংয়ের নামে পায়ে কাটাছেঁড়া চলতে থাকে। দ্বিতীয় দিন থেকে চিকিৎসা বিল ২ হাজার ৩০০ টাকা। এভাবেই এক মাসে বিল হয় অর্ধলক্ষ টাকা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শফিকুলের ঘনিষ্ঠ ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হারবাল সহকারী আ. মোতালেব। তারা দুই জন মিলে মজিবরের চিকিৎসা করেন। এক মাস চিকিৎসা করে রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে অবনতি হয়েছে। বিল ধরিয়ে দেন অর্ধলক্ষ টাকার অধিক। কিছু টাকা পরিশোধ করেন মজিবর রহমান। পরে সে অন্যত্র চিকিৎসা করতে গেলে হুমকি ধমকি দেন শফিকুল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শফিকুল ইসলামের চিকিৎসা বিষয়ে কোন ডিগ্রি নেই। এর আগে সে স্বর্ণের পুতুল বিক্রির নামে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় অপমানিত হয়ে পরে বাজারে ফার্মেসি ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন।
মজিবর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে তেমন টাকা ছিলনা, তাই শফিকুলের কাছে গিয়েছিলাম। সে আমাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। পা তো ভালো হয়নি, এখন বাড়ি বিক্রি করে তার টাকা দিতে হবে।’
অভিযোগর বিষয়ে জানতে চাইলে আ. মোতালেব বলেন, ‘আমিও অনেক সময় মজিবর রহমানকে সরকারি ওষুধ দিয়ে সহায়তা করেছি। শফিকুল ডাক্তার মজিবর রহমানের কাছে পূর্বের পাওনা রয়েছে। মজিবর রহমান ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন, এজন্য বলেছি শফিকের দোকানে ড্রেসিংয়ে ভালো হবে।’
অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মজিবরের কাছে অনেক আগে থেকেই টাকা পাই।’ বিষয়টি চেয়ারম্যান দেখছেন জানিয়ে এর বাইরে কিছুই বলতে চাননি।
গোয়াতলা ইয়নিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম টুটন বলেন, ‘সামান্য চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দিতা রায় বলেন, ‘গ্রাম্য চিকিৎসক আপদকালীন যে রোগগুলো ঠান্ডা, জ্বর, কাশি, সর্দির চিকিৎসা করতে পারেন। কোন সার্জিকেল বিষয়ে নয়। যদি এমন কিছু করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভুল করেছেন। এ ছাড়া রোগী সুস্থ না হলে অবশ্যই হাসপাতালে পাঠাতে হবে।