বান্দরবান প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪২ পিএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৪১ এএম
ফাইল ফটো
বান্দরবানে সেনাবাহিনীর অভিযানে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এক সদস্য নিহত হয়েছে। তা ছাড়া সেনাসদস্যরা অস্ত্র-গোলাবারুদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছেন।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সেনাবাহিনী এই অভিযান চালায় বলে সন্ধ্যায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। আইএসপিআর পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান এই বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, রুমায় মসজিদে ও থানচি বাজারে হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনায় পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের কর্মকাণ্ড বন্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, র্যাব, আর্মড পুলিশসহ যৌথ বাহিনী।
সূত্র জানায়, সোমবার রুমা উপজেলার মুনলাইপাড়া এলাকায় কেএনএফের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। এ সময় গুলিতে কেএনএফের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলেই গুলিতে কেএনএফের একজন সশস্ত্র সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এখনও তার নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, এদিকে সাঁড়াশি অভিযান ও কেএনএফের সশস্ত্র হামলার খবর আসছে, যাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায়। কেএনএফ সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয়দের ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের হামলার গুজব ছড়াচ্ছে। ফলে সরকারি স্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, সাঁড়াশি অভিযানে কেএনএফের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক দিনে। রুমা ইউনিয়ন ও পাইন্দু ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সানাইক্রপাড়া, হ্যাপী হিলপাড়া, বাসতালাংপাড়া, পলিপ্রাংসা এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তা ছাড়া রাঙামাটির বড়থলি এলাকায়ও গোলাগুলি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
কেএনএফ সদস্য সন্দেহে আরও তিনজন কারাগারে
একই ঘটনায় কেএনএফ সদস্য সন্দেহে আরও তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তারা সবাই নারী। তাদের মধ্যে দুই নারীর সঙ্গে চার শিশু রয়েছে।
বান্দরবান আদালতের জিআরও বিশ্বজিৎ সিংহ জানান, রুমায় উপজেলা চত্বর ঘেরাও করে আনসার সদস্যদের অস্ত্র-গোলাবারুদ লুটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার তিন নারীকে সোমবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। বান্দরবান চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নুরুল হক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিরা হলেন, রুমার ইডেনপাড়া এলাকার লাল নুন পুই বম, লাল রুয়াত ফেল বম ও লাল এং কল বম। তাদের মধ্যে লাল রুয়াত ফেল বমের সঙ্গে রয়েছে তিন বছরের একটি মেয়ে ও লাল এং কল বমের তিন সন্তান। তিন সন্তানের একজন দুগ্ধপোষ্য, যার বয়স দেড় মাস। অন্য দুজনের বয়স তিন ও চার বছর।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক ফজলুল হক জানান, এই শিশুদের অন্য কারও হেফাজতে রাখেনি তাদের স্বজনরা। তাই তাদের মায়ের সঙ্গে থাকার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। শিশুরা সেখানে কেমন থাকবে সে বিষয়ে বান্দরবানের জেল সুপার মো. জান্নাতউল ফরহাদ জানান, কারাগারে আরও শিশু মায়ের সঙ্গে রয়েছে। তাদের জন্য আলাদা খাবার ও ডে-কেয়ারের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। তারা সীমানার মধ্যে মায়েদের সঙ্গে ভালোভাবে থাকতে পারছে।
রিমান্ডে আরও ৫ জন
একই ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও পাঁচজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত এবং দুই নারীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। বান্দরবানের আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক পায়েল পালিত জানান, দুই মামলায় গ্রেপ্তার সাতজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ। শুনানি শেষে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বান্দরবানের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুরুল হক আদেশ দিয়েছেন। আদেশে বিচারক পাঁচ পুরুষ আসামিকে দুই দিনের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া দুই নারী আসামিকে জেলগেটে দুই দিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। আসামিরা হলেন- থানচির আসে লনসেও বম, ভাননুন নুয়াম বম, লাল রিন তেলায়াং বম, জেমিনিও বম, রুমার লিয়ান সিয়াম বম, ভান নুয়াম থাং বম, ভান লাল থাং বম।
এর আগে রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুট, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় ৬৮ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বান্দরবানের আদালত। ৬৮ জনের মধ্যে ৫৯ জনকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ও তিন নারীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।