কুষ্টিয়া প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১২ পিএম
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩০ পিএম
আমিরাত লুবে অয়েল (মবিল) কোম্পানির কর্মী জাহাঙ্গীর আলম। প্রবা ফটো
কুষ্টিয়ায় আমিরাত লুবে অয়েল (মবিল) কোম্পানির কর্মী জাহাঙ্গীর আলমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তারই এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ঘটনাটিকে অপমৃত্যুই বলছে পুলিশ।
ময়নাতদন্ত রিপোর্টটি সঠিক নয় দাবি করে কোম্পানির মার্কেটিং ও সেলস ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জাহিদকে আসামি করে কুষ্টিয়ার আদালতে মামলার আবেদন করেছে জাহাঙ্গীরের পরিবার।
কুষ্টিয়ার সিনিয়র চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আমলি আদালতে আবেদনটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রউফ। তিনি জানান, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৫ মে।
জাহাঙ্গীরের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার লাউখুলা দিগরবাইদ গ্রামে। তিনি কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুরে গির্জানাথ মজুমদার লেনের বাড়িতে স্ত্রী, দুই শিশুকন্যাসহ ভাড়া থাকতেন।
আদালতে মামলার আবেদনটি করেন জাহাঙ্গীর আলমের চাচা আবু হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইপোকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরের মরদেহ ঝুলিয়ে দেয়। এর আগে একটি অনৈতিক বিষয় মেনে না নেওয়ায় মবিল কোম্পানির ওই কর্মকর্তা জাহিদের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের মতবিরোধ হয়। জাহাঙ্গীর আমাকে বিস্তারিত জানায়। আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম দ্রুত কুষ্টিয়া ছেড়ে ঢাকায় চলে আসতে। এরই মাঝে জাহাঙ্গীরকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে তারা।’
নিহতের স্ত্রী রুবিনা খাতুন বলেন, ‘৬ মার্চ (বুধবার) সকাল ৯টার দিকে আমি জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বাসা থেকে বের হই। পরে আমরা কুষ্টিয়া ভেড়ামারা সড়ক এলাকার ব্লু-বার্ড কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে বড় মেয়ে জাফরিনকে আনতে যাই। আমাকে স্কুলে রেখে জাহাঙ্গীর তার বস জাহিদ সাহেবের সঙ্গে অফিসের কাজে যাওয়ার কথা বলে চলে যায়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। বাসায় এসে দেখতে পাই শুধু বারান্দার গ্রিল গেটের বাইরে থেকে তালা ঝুলছে এবং ঘরের দরজা বাইরে থেকে টেনে এনে ভেড়ানো এবং ভেতরের দিকে একটি চেয়ার ভেড়ানো ছিল। ভেতরে ঢুকে স্বামীকে ডাকাডাকি করতে থাকি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। পরে খুঁজতে খুঁজতে ফ্রিজের পাশে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পাই। সেখান থেকে তাকে নামিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আমার স্বামীকে মৃত ঘোষণা করে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আমিরাত লুব ওয়েল কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জাহিদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাহাঙ্গীরের ময়নাতদন্তকারী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রমাণিত হয়েছে। তবে এর বাইরে আরও কোনো ঘটনা বা কেমিক্যাল প্রয়োগজনিত মৃত্যু হয়ে থাকলে সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো ক্লিনিক্যাল কোনো আয়োজন আমাদের জেলা পর্যায়ে নেই।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, ‘সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী জাহাঙ্গীরের মৃত্যু আত্মহত্যা বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’