জাকির হোসেন, বুড়িচং (কুমিল্লা)
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৩ পিএম
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লা-বুড়িচং-মিরপুর সড়কে সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে জিপি। তবে জিপি বন্ধ হলেও এ সড়কে বেড়েছে ভাড়া নৈরাজ্য। সিএনজি অটোরিকশা চালকরা নির্ধারিত ভাড়া না নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। ব্যস্ততম এ সড়কের যাত্রীরা সিএনজি অটোরিকশা চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এ সড়কে যাতায়াতকারী সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন সংগঠনগুলো কর্তৃক আদায়কৃত দৈনিক চাঁদাকেই বলা হয় জিপি তথা গেট পাস।
গত শনিবার ও রবিবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কুমিল্লাগামী সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া দ্বিগুণ হারে আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্ট করেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। এ নিয়ে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কুমিল্লায় যাতায়াতের প্রধান বাহন হচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এ পথে চলাচলরত অধিকাংশ যাত্রীই প্রতিদিনের যাতায়াতে সিএনজি অটোরিকশার ওপর নির্ভরশীল। জেলা শহর কুমিল্লায় অফিসগামী মানুষ, রোগী, শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিনই এ পথ ব্যবহার করেন। যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার বিভিন্ন অফিস-আদালত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কুমিল্লার সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও কিছু অসাধু সিএনজি অটোরিকশাচালক দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। এ ছাড়া ব্রাহ্মণপাড়া থেকে বুড়িচংয়ের ভাড়া ২০ টাকা, বুড়িচং থেকে কুমিল্লা ৩০ টাকা হলেও এক্ষেত্রে আদায় করা হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া।
সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মুহাম্মাদ আবু জাহের এ সড়কে সম্প্রতি জিপি ব্যবস্থা বন্ধ করেন। জিপি বন্ধের সুবিধার পরও এ ধরনের ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সাধারণ যাত্রীসহ স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে অসাধু সিএনজি অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও বন্ধ হয়নি ভাড়া নৈরাজ্য। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিয়েছে।
এ সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী মাহ্ফুজ আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রীদের কাছ থেকে ব্রাহ্মণপাড়া থেকে কুমিল্লা সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়। ঈদের অজুহাত দিয়ে এই ভাড়া নৈরাজ্য শুরু হলেও তা এখনও চলছে। যাত্রীরাও বিকল্প গণপরিবহন না থাকায় বাধ্য হয়েই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সিএনজি অটোরিকশাতেই যাতায়াত করছেন। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা জানান, প্রতিনিয়ত সিএনজি অটোরিকশা চালকরা একধরনের সন্ত্রাসী কায়দায় টাকা লুটে নিচ্ছে। বিকল্প যানবাহন না থাকায় সবাই তাদের হাতে একপ্রকার জিম্মি।
জান্নাতুল ফেরদৌসী নামে আরেক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এ সড়কের জিপি বন্ধ হয়েছে। এখন আর চালকদের জিপি নামের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় না। অথচ সড়কে ভাড়া কমানোর বদলে ভাড়া দ্বিগুণ আদায় করছেন তারা। এরা সাধারণ যাত্রীদের ওপর জুলুম করছেন। শিগগির এর সমাধান প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণ জানতে চাইলে সিএনজি অটোরিকশা চালক সুমন মিয়া বলেন, বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তাতে নির্ধারিত ভাড়ায় আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই, এ সড়কে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া বাড়ানো হোক।
আরেক চালক শামসু মিয়াকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিতে পেরে বলেন, অন্যরা নিচ্ছে তাই আমিও নিচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, আমি আজও (রবিবার) মাঠে নেমে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে সিএনজি অটোরিকশা আটক করেছি। এ সড়কের অটোচালকরা বেপরোয়া আচরণ করছে। সড়তে শৃঙ্খলা ফেরাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
এদিকে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, আমরা সিএনজি অটোরিকশা চালক এবং সমিতির লোকজনদের ডেকে বিভিন্ন সময় মিটিং করে ভাড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে বলেছি। এ ছাড়াও যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে চালকদের জরিমানাসহ সতর্ক করেছি। ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।