× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

২০ ঘাটে খাসকালেকশন, রাজস্ব হারাচ্ছে চসিক

সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৪৬ এএম

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৪৮ এএম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা ১৫নং, সল্টগোলা, বাংলাবাজার, ডাঙ্গারচরসহ ২০টি ঘাট ইজারা দিয়ে প্রতি বছর আদায় হতো প্রায় ৭ কোটি টাকার রাজস্ব। কিন্তু এবার এই ঘাটগুলো ইজারা না হওয়ায় নামমাত্র খাসকালেকশন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগ। এর ফলে চসিক অন্তত ৬ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে। 

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, পহেলা বৈশাখের সময় প্রতি বছর চসিকের আওতাধীন এই ২০টি ঘাট ইজারা হয়ে থাকে; কিন্তু এ বছর পরিকল্পিতভাবেই এগুলো ইজারা দেওয়া হয়নি। চসিকের রাজস্ব বিভাগের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুরোনো ইজারাদারের সঙ্গে আঁতাত করে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দেওয়ায় ইজারা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে ২০টি ঘাটে খাসকালেকশন করে আদায়ের সিংহভাগ লুটপাটের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

চসিকের রাজস্ব বিভাগের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির আগেই চসিক মালিকানাধীন ২০টি ঘাট পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। এবারও রাজস্ব বিভাগ ইজারা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন ১৫১৬৩/২৩নং মামলার আদেশ মোতাবেক ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করে চসিক কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযোগ উঠেছে, এটি চসিকেরই কৌশল। অভিযোগকারীরা বলছেন, মামলাটি হয়েছে চসিকের রাজস্ব বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পুরোনো ইজারাদারের আঁতাতের মাধ্যমে। ইজারা না দিয়ে খাসকালেকশনে রাজস্ব আদায় করা হলে চসিকের অগোচরে কোটি টাকার রাজস্ব হাতিয়ে নিতে পারবে। 

২০টি ঘাট ও সেগুলোর সম্ভাব্য ইজারা মূল্য

চসিক নিয়ন্ত্রণাধীন ২০টি ঘাট হলোÑ পতেঙ্গা ১৫নং ঘাট, সল্টগোলা, বাংলাবাজার, নয়ারাস্তা পাকা পুলঘাট, সদরঘাট, ফিশারিঘাট, নতুন ঘাট, এয়াকুব নগর লইট্যা ঘাট, পতেঙ্গা ১৪নং ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট, ১১নং মাতব্বর ঘাট, ১২নং তিনটিংগা ঘাট, ৭নং রুবি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি সংলগ্ন ঘাট, ৯নং বি ও সি ঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, চাক্তাই খালের পাশে পানঘাট থেকে গাইজ্জের ঘাট, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট, চাক্তাই ঘাট ও চাক্তাই লবণঘাট।

চলতি বছর এই ২০টি ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্য ছিলÑ পতেঙ্গা ১৫নং ঘাট ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সল্টগোলা ঘাট ৫৭ লাখ ৩২ হাজার ১০০, বাংলাবাজার ঘাট ২৪ লাখ ৪ হাজার ৬০০, সদরঘাট ২১ লাখ ৯৭ হাজার ১২৪, ফিশারিঘাট ২৪ লাখ ১৭ হাজার ৬৭, পতেঙ্গা ১৪নং ঘাট ও গুচ্ছগ্রাম ঘাট ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০, ১১নং মাতব্বর ঘাট ৮৭ লাখ ৩২ হাজার ৪০০, ৯নং বি ও সি ঘাট ৩৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০০, অভয়মিত্র ঘাট ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০, গাইজ্জের ঘাট ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫০০, পতেঙ্গা চাইনিজ ঘাট ৫ লাখ ৫৭৩, বাকলিয়া ক্ষেতচর ঘাট ৮ লাখ ৩৬ হাজার ও চাক্তাইয়ের পাঁচটি লবণঘাট ২৪ হাজার ৪২০ টাকা।

চসিকের দরপত্রের বিধান অনুযায়ী হিসাব করলে দেখা যায়, পতেঙ্গা ১৫নং ঘাটের সম্ভাব্য ইজারা মূল্যের সঙ্গে ২০ ভাগ ভ্যাট যোগ করলে মোট ইজারা দাঁড়ায় ৩ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে দৈনিক কিস্তি পড়ে ৮৮ হাজার ৬০২ টাকা। একইভাবে সল্টগোলা ঘাটের দৈনিক কিস্তি পড়বে ১৮ হাজার ৮৪৫ টাকা। একইভাবে প্রতিটি ঘাটে ইজারা আদায় হওয়ার কথা দৈনিক ১০ হাজার থেকে ৮৬ হাজার টাকার মতো।

কিন্তু সুকৌশলে দৈনিক ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার নামমাত্র মূল্যে খাসকালেকশন আদায় করছেন চসিকের রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা। 

খাসকালেকশনের চালচিত্র

জানা যায়, চসিকের এসব ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পারাপারসহ পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। ঘাটগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় নতুন বছরের পহেলা বৈশাখে ২০ ঘাটের ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে চসিকের রাজস্ব শাখা খাসকালেকশন আদায়ে নেমেছে। 

নগরীর অভয়মিত্র ঘাটের খাসকালেকশন করছেন ইজারাদার মো. আবুল। তিনি বলেন, ‘এবার এখনও যেহেতু ঘাটটি ইজারা হয়নি, তাই দৈনিক ২ হাজার টাকা মজুরিতে অভয়মিত্র ঘাটটি নিয়েছি। খাসকালেকশন করে সিটি করপোরেশনকে এসব টাকা দিই।’

নগরীর বাংলাবাজার ঘাটের খাসকালেকশনের দায়িত্ব পাওয়া লোকমান দয়াল বলেন, দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বাংলাবাজার ঘাটটির খাসখালেকশনের দায়িত্ব নিয়েছি।

চসিকের ২০টি ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাট পতেঙ্গা ১৫নং। এই ঘাট থেকে চসিকের দৈনিক আয় ৮৮ হাজার টাকা এবং বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা। এই বড় ঘাটটির খাসকালেকশনের দায়িত্ব পেয়েছেন ইজারাদার মোহাম্মদ শুক্কুর। তিনি বলেন, ‘এখনও ঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়নি। তাই সিটি করপোরেশন থেকে নিয়ে খাসকালেকশন করছি।’ 

‘চসিককে দৈনিক কত করে দিচ্ছেন?’Ñউত্তরে খাসকালেকটর মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, ‘দিনে তিনÑচার হাজার টাকা করে দিব। এখনও দিইনি। সিটি করপোরেশন থেকে রফিক নামে একজন লোকও নিয়োগ দিয়েছে। এখানে ঘাট পারাপারে কোনো টাকা আমাদের নিজেদের পকেটে নেব না।’ 

ইজারাদার দিনে যেখানে ৮৮ হাজার টাকা চসিকের রাজস্ব বিভাগকে দিত, সেখানে খাসকালেকশনে মাত্র তিন-চার হাজার টাকা দেওয়া মানে বিশাল ঘাটতি। সেই হিসাবে চসিকের ২০টি ঘাট থেকে যেখানে প্রায় ৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো, সেখানে খাসকালেকশনে ২০টি ঘাটে হবে ১ কোটি টাকার মতো। সেই হিসাবে চসিক অন্তত ৬ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কর্মকর্তারা যা বলছেন

ছয় কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

তবে বিষয়টি চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে জানালে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘খাসকালেকশনে চসিকের রাজস্ব হারাচ্ছে, সেটা সঠিক। যেহেতু মামলা আছে, তাই ইজারা স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিগগির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে আপনাদের সুখবর দিতে পারব।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা