প্রার্থীকে অপহরণের পর নির্যাতন
নাটোর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০১ পিএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০৫ পিএম
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনসহ তিনজনকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত আতাউর রহমান (৪৫) নামে আরও এক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার চকপুর গ্রামে আতাউরের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাড়ির গ্যারেজ থেকে কালো রঙের হায়েস মাইক্রোবাসটি জব্দ করে পুলিশ। এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে দেশি-বিদেশী অস্ত্রও জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া দেলোয়ারকে অপহরণে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলের বিপুল পরিমাণ নির্বাচনী লিফলেট, পোস্টার ও স্টিকার পাওয়া গেছে ওই মাইক্রোবাসে।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান নাটোর জেলার পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এ ঘটনায় আতাউরসহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আতাউর চকপুর গ্রামের মৃত রবিউল্লাহ প্রামাণিকের ছেলে।
১৬ এপ্রিল জেলা নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে চেয়ারম্যানপ্রার্থী দেলোয়ারসহ তিনজনকে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। কয়েক ঘণ্টা নির্যাতনের পর গুরুতর আহত অবস্থায় দেলোয়ারকে তার বাড়ির সামনে ফেলে যায় অপহরণকারীরা। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাচনে আরেক চেয়ারম্যানপ্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলের নির্দেশে দেলোয়ারকে অপহরণ করা হয়েছিল। অভিযুক্ত রুবেল স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন দেলোয়ারের ভাই মজিবুর রহমান।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দেশজুড়ে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঘটনার সময় বিদেশে অবস্থান করলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে গত শুক্রবার দেশে ফিরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেলোয়ারকে দেখতে যান প্রতিমন্ত্রী পলক। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি দুঃখিত, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। জড়িতরা যারাই হোক, তাদের বিরদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরদিনই আতাউরকে গ্রেপ্তার করা হলো। ব্রিফিংয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজে দেলোয়ারকে বাধা দিতে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সুমন আহমেদ নামে একজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তার সঙ্গে কে কে ছিল তাও জানিয়েছেন সুমন। তবে অপহরণের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা যাচ্ছিলো না।
আতাউরকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, আতাউরকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। গাড়ির ভেতর থেকে দুটি চাইনিজ চাপাতি, একটি বার্মিজ কাটার, দুটি রামদা, একটি চাপাতি, একটি টিপ চাকু (সুইস গিয়ার), দুটি স্টিলের পাইপ ও দুটি স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে। গাড়িতে রুবেলের লিফলেট, পোস্টার ও স্টিারও পাওয়া গেছে। অপহরণের জড়িত বাকিদের ধরণের পুলিশের অভিযান অব্যহত আছে।
এদিকে এ ঘটনায় নাম আসায় চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিব রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন এবং সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। অভিযুক্ত রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। এরই মধ্যে তাকে নির্বাচন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী পলক।