× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ধুঁকে ধুঁকে ধ্বংসের পথে কালুহাটির পাদুকা শিল্প

শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৪ পিএম

আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৪ পিএম

ধুঁকে ধুঁকে ধ্বংসের পথে কালুহাটির পাদুকা শিল্প

‘করোনা শুরুর আগে প্রতি রোজার ঈদে ৭৫টি কারখানায় ৫০-৬০ কোটি টাকার পাদুকা বিক্রি হতো। করোনা মৌসুমে তা ৩০-৩৫ কোটি টাকায় নেমে আসে। গত বছর দাঁড়ায় ১৫ কোটিতে। কিন্তু চলতি মৌসুমে কারখানাগুলোতে পাদুকার যা অর্ডার এসেছে, তাতে মাত্র ২-৩ কোটি টাকার ব্যবসা করা সম্ভব। ৭৫টি কারখানার মধ্যে চলছে মাত্র ১৬টি। একসময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করতেন। বর্তমানে তারা কাজ হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন। কালুহাটি পাদুকা পল্লীতে এখন চরম দুর্দিন চলছে।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর চারঘাটের কালুহাটি পাদুকা শিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা।

বড়াল নদের পাড়ের কালুহাটি পাদুকা পল্লীতে দেখা যায় বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ। অথচ উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গত অক্টোবরে কালুহাটি পাদুকা ক্লাস্টারে ১৩টি অত্যাধুনিক মেশিনসহ দেশের প্রথম পাদুকা কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এসএমই ফাউন্ডেশন। কাজের চাপ না থাকায় সেই কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টারও ফাঁকা পড়ে আছে। 

কালুহাটি পাদুকা পল্লীর উত্থান

১৯৮০ সালে কালুহাটি পাদুকা পল্লী গড়ে তোলার প্রথম পরিকল্পনা করেছিলেন সুবেদার আমজাদ হোসেন নামে একজন। চাকরি সূত্রে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতা পুঁজি করে এ পেশায় নামেন তিনি। এরপর একে একে ৭৫টি কারখানা গড়ে ওঠে। এসব কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার শ্রমিক যুক্ত হয়। যার মধ্যে ২ হাজার ছিল নারী শ্রমিক, যারা গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি জুতা তৈরির কাজ করতেন।

এখানকার কারখানা মালিকদের প্রায় সবাই কারিগর-শ্রমিক থেকে মালিক হয়েছেন। এজন্য নিজেরাই নতুন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিতেন। এভাবেই প্রতিটি কারখানার শ্রমিকরা দক্ষ কারিগর হয়ে গড়ে ওঠেন। এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ ক্রেডিট হোলসেলিং কার্যক্রমের আওতায় ক্লাস্টারের ৮৫ জন পাদুকা উদ্যোক্তার মাঝে সহজ শর্তে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। এভাবে কালুহাটি পাদুকা পল্লী সারা দেশের পাদুকাজগতে এক নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

হাতে তৈরি জুতা-স্যান্ডেলের চাহিদা

৫-৬ বছর ধরে দেশে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তৈরি হচ্ছে জুতা। এগুলোকে বলে পিও ফুটওয়্যার কারখানা। করোনাকালে হাতে তৈরি কারখানাগুলো নানা সংকটে পড়ে। তখন দেশের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী স্বয়ংক্রিয় মেশিনে পাদুকা তৈরি শুরু করে। হাতে পাদুকা তৈরির কারখানাগুলো সেসব বড় কোম্পানির সঙ্গে পেরে উঠছে না।

আব্দুল মান্নান নামে কারখানার এক মালিক বলেন, বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে আমার ১৬ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। আগে এসব দোকানি জুতা-স্যান্ডেল কারখানা থেকে নিত আর কিছু করে টাকা পরিশোধ করত। কিন্তু এখন জুতা-স্যান্ডেলও দোকানে ডেলিভারি দিচ্ছে বড় কোম্পানিগুলো। মাল বিক্রির পরে টাকা নেয় এসব কোম্পানি। এসব দোকানি এখন আমাদের মালও নিচ্ছে না, বকেয়া টাকাও পাচ্ছি না। এতে আমার মতো অনেক কারখানা সংকটে পড়েছে।

দুই বছরে কাঁচামালের দাম দ্বিগুণ

পাদুকা শিল্প-সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুসারে, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামালের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০২২ সালে ডাস্টার রেক্সিন প্রতি গজ ছিল ১৫০ টাকা, বর্তমানে ২৭০ টাকা। আস্তর ফোম ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা, নাপা ফোম ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০ টাকা, ৪ পিসের রাবার আগে ছিল ২৬০ টাকা এখন ৪৫০ টাকা, ১০ কেজি পিউ আঠা ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে ২২০০ টাকা ও ১৫ লিটারের পেস্টিং আঠা ২৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪০০ টাকা হয়েছে। পাদুকার কাঁচামাল পাইকারি বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, দুই বছরের মধ্যে কাঁচামালের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক সময় বেশি দাম দিয়েও কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। 

ঋণ না পাওয়ায় মূলধন সংকট

কালুহাটির অধিকাংশ মালিক এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে কারখানা পরিচালনা করত। কিন্তু পরিশোধ করলেও ঈদের আগে কোনো কারখানা মালিক নতুন করে আর ঋণ পাননি। কারখানা বন্ধের পেছনে এটি বড় কারণ বলে মনে করছেন তারা।

শিশির সুজ কারখানা মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘১২ বছর ধরে শ্রমিকদের নিয়ে জুতা-স্যান্ডেল তৈরি করে আসছি। মার্কেটে অনেক টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এর মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনকে ৪ লাখ ও সমবায়কে ১ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করলাম। রোজার আগে আবারও ঋণ পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পেলাম না। এজন্য ব্যবসা বন্ধ করে বগুড়ায় একটি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি।’ শুধু সাইফুল ইসলামই নয়, তার মতো সবারই এক অবস্থা বলে জানান।

যা বলছে এসএমই ও সমবায় 

এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে, কালুহাটি পাদুকা পল্লীর সুদিন ফেরাতে দেশের প্রথম কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপন করে ১৩টি মেশিন বসানো হয়েছে। সেখানে সেলাই, ডায়িস, স্কিন পিন্ট, কাটিং ও রাফিংসহ নানা ধরনের অত্যাধুনিক কাজ করা যাচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় পিও মেশিন স্থাপনের কার্যক্রমও চলমান।

ফাউন্ডেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, পাদুকা পল্লীর সুদিন ফেরাতে প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে সেখানে স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। এজন্য ব্যাংক আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অনেকে কারখানা বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গেছে। তাদের পুনরায় এ পেশায় ফেরাতে চেষ্টা করছি।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মহসিন মজুমদার বলেন, সমবায় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ কার্যক্রম চালু ছিল। ঋণ পরিশোধের পরে পুনরায় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কারখানা মালিকরা ঠিকমতো কাগজপত্র দিতে না পারায় এবং ঋণ বিতরণে কিছু নিয়মে পরিবর্তন আসায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা