রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১১ পিএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১১ পিএম
ঠাকুরগাঁওয়ের একটি লিচু বাগান থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। প্রবা ফটো
ঠাকুরগাঁও জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ২৫৬টি লিচু বাগান রয়েছে। গাছের প্রতিটি ডাল থেকে লিচু ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে চারপাশে। মুকুলের সুগন্ধে পাখা মেলে এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে মৌমাছিরা। ঠাকুরগাঁওয়ের লিচু বাগানগুলোর বর্তমান দৃশ্য এখন এমনই।
ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির আনাগোনায় খুলনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে এসেছেন অর্ধশতাধিক মৌচাষি। গাছের ফাঁকে ফাঁকে বসানো মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
এদিকে বাগান থেকেই সুস্বাদু মধু ক্রয় করছেন স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। চলতি মৌসুমে গাছের মুকুল ভালো হওয়ার আশায় মধু সংগ্রহে খুশি মৌচাষিরাও।
ঠাকুরগাঁও বড়বাড়ি এলাকায় মধু সংগ্রহ করছেন মধুচাষি আবু রায়হান। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্রায় ২ মাস যাবত লিচুগাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছি। আমরা এখানে ছয়জন কাজ করি। সপ্তাহে এক দিন মধু কাটি। প্রতি সপ্তাহে ২০০ থেকে ৩০০ কেজি মধু সংগ্রহ করি। মধুর বাজারমূল্য ভালো। আশপাশের এলাকার মানুষজনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এখান থেকে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এই মৌমাছিগুলো আমার পোষা।
রাজশাহী থেকে আসা মৌচাষি নাদির ইসলাম বলেন, প্রতি মৌসুমে মৌমাছি নিয়ে আমরা এ জেলায় আসি। কারণ এ জেলায় অনেক লিচু বাগান রয়েছে। ফুল থেকে আমরা মধু উৎপাদন করি। মানুষ এখান থেকে মধু কিনে নিয়ে যায়। এখানকার মধু খুবই পরিচিত ও ভালো। এতে কোনো ভেজাল নেই।
বড়বাড়ি গ্রামের লিচু বাগান মালিক কাউছার ইসলাম বলেন, মৌমাছির পরাগায়নের কারণে লিচুর ভালো ফলন হয়। এতে সব লিচুগাছে ফল আসে। পাশাপাশি আমরা মধু পাই। মৌচাষিরা যদি প্রতিবছর আসেন, তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হবে। সেই সঙ্গে আবহাওয়া ভালো থাকলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হবে। পাশাপাশি আমরা লাভবানও হব।
মধু সংগ্রহের শ্রমিক জয়নুল হক বলেন, লিচু বাগানে মধু সংগ্রহ করলে গাছের পরাগায়ন ভালো হয় এবং লিচুর ফলনও ভালো হয়। আমরা ছয়জন এখানে নিয়মিত কাজ করে মধু সংগ্রহ করি। আমাদের বেতন ভালো।
শহরের আশ্রমপাড়া থেকে মধু কিনতে আসছেন লাবু রহমান। তিনি বলেন, মধুচাষিরা এখানে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি বিক্রিও করছেন। আমরা বাজারে যে মধু কিনি, সেগুলোয় কেমিক্যাল বা ভেজাল থাকে। তবে এখানকার মধু খাঁটি। নিজে দেখে বেশ ভালো এবং খাঁটি মধু ক্রয় করলাম।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গাছে মৌমাছির অবাধ বিচরণে পরাগায়নে ভালো ফলন হয়। এ পরাগায়নের মাধ্যমে আমাদের লিচুর ফলন যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি মধু উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে মধুচাষিও লাভবান হচ্ছেন। আমরা আমাদের বিভাগ থেকে মৌচাষের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমরা অনেক চাষিকেই প্রশিক্ষিত করেছি, যাতে তারা যথাযথভাবে কাজ করতে পারেন। মৌচাষিদের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ হবে। এ জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ২৫৬টি লিচু বাগান রয়েছে।