× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কারাগারে নারী হাজতিকে নির্যাতন, দুই কারারক্ষীকে বদলি

গাইবান্ধা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫০ পিএম

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২১:০২ পিএম

গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম। ফাইল ফটো

গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম। ফাইল ফটো

গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নারী হাজতিকে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামসহ দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে তাদের বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বদলি করা হয়।

বদলি হওয়া অপর কারারক্ষীর নাম সাবানা খাতুন। তাদের মধ্যে প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামকে দিনাজপুর কারাগার এবং সাবানা খাতুনকে ঠাকুরগাঁও কারাগারে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের ভেতরে কারাগারের প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে এক নারী কয়েদির অবৈধ কর্মকাণ্ড দেখে ফেলে মোর্শেদা খাতুন সীমা। পরে তাকে বিবস্ত্র করে, হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে অভিযুক্ত দুই কারারক্ষীসহ অন্যরা। সীমাকে কারাগারের নারী-পুরুষ উভয়ই মিলে বিবস্ত্র করে স্পর্শকাতর স্থানে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। কামড় দিয়ে ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে শরীরের মাংস। ঘটনা গোপন রাখতে দেওয়া হয় হত্যাসহ সম্ভ্রমহানির হুমকিও।

এমন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে অসুস্থ সীমার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা, জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ১৬ এপ্রিল গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন সীমার মা করিমন নেছা।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে রয়েছেন। কিছু দিন আগে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম এবং মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলে সীমা। এতেই আশরাফুল ও মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং তারা প্রতিনিয়ত ঘটনার বিষয়ে কাউকে বললে কারাগারের ভেতরেই সীমাকে খুন-জখমে হত্যা করে আত্মহত্যা করে মৃত্যু হয়েছে কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকে।

সীমা বারবার তাদের (সুবেদার আশরাফুল-মেঘলা) ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বলবেনা বলে জানানোর পরেও আশরাফুল ও মেঘলা আতঙ্কিত হয়ে কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে।

একপর্যায়ে আশরাফুল সীমাকে জিম্মি করতে বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্তসহ হাত এবং পরনের কাপড় ধরে টানা-হ্যাঁচড়াসহ একাধিকবার শ্লীলতাহানি ঘটায়। পরে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়েও আশরাফুলের মনোবাসনা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়ে আশরাফুলসহ তার সহযোগীরা সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে নেয়। অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার নষ্ট করে ভেঙে দেয়।

যখন সীমা এসব ঘটনা জেল সুপারকে বিচার দেওয়ার কথা জানায়, তখন আশরাফুল জেলার সাহেব তার লোক, সে (সুবেদার) নিজের টাকা খরচ করে জেলারকে এই কারাগারে বদলি করে এনেছেন বলে জানিয়ে জেলার তার (সুবেদারের) কোনো বিচার করতে পারবে না বলে জানায়।

চলতি বছরের ২০ মার্চ দুপুরে আশরাফুলের নেতৃত্বে কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা, আলেফা, কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা পরিকল্পিতভাবে জেলা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে অতর্কিত সীমার মাথায়, কোমড়ে, বুকে, পিঠে, দুই পায়ের হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে। মেঘলা সীমার ডান হাতের দাপনায় কামড় দিয়ে মাংস ছিঁড়ে নেয়।

শুধু তাই নয়, আশরাফুল, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরে ঢুকে সীমাকে টেনে বের করে সেলের ভেতরে নিয়ে দুই হাতে হ্যান্ডকাপ ও দুই পা রশি দিয়ে বেঁধে বিবস্ত্র করে। লাঠি দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থান (দুই ঊরু), পায়ের পাতায় পেটাতে থাকে।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গাইবান্ধা কারাগারে এলেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। সীমার গাইবান্ধা আদালতে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের দেখা পান করিমন নেছা। এদিন সীমা মায়ের কাছে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল জেলা কারাগারে ঘটনা তদন্তে যান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেব। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অভিযুক্তদের মধ্যে দুই কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তসাপেক্ষে পরে ব্যবস্থা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা