× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, পিটুনিতে নিহত ২ : তদন্তে কমিটি

মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৩ পিএম

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ২২:০৮ পিএম

বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় স্কুলকক্ষের চিত্র। প্রবা ফটো

বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় স্কুলকক্ষের চিত্র। প্রবা ফটো

ফরিদপুরের মধুখালীতে মন্দিরে আগুনের ঘটনায় সন্দেহের জেরে বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে দুই শ্রমিকের নিহতের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আর জেলা আনসার বাহিনীর একজন করে প্রতিনিধি থাকবে কমিটিতে থাকবে। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালী মন্দিরে আগুন লাগে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্দেহের বশে স্থানীয়রা লোকজন পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজে থাকা শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই শ্রমিক ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

তারা হলেন, উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে ২১ বছর বয়সী আশরাফুল ও তার ভাই ১৫ বছরের আশাদুল। তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিক্ষুব্ধদের পিটুনিতে আহত আরও পাঁচজনকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। এর মধ্যে দুইজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বাকি তিনজনকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। আটকও হয়নি কেউ।

যা বলছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা

ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচগ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাটির কৃষ্ণনগর গ্রামে বারোয়ারি কালী মন্দিরে ঠিক সন্ধ্যার দিকে আগুন জ্বলতে দেখে লোকজন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসময় পাশেই পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাতজন শ্রমিক টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন। তারাই মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করেছেন— এমন সন্দেহের জেরে পঞ্চপল্লীর একদল বিক্ষুব্ধ মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই শ্রমিকদের ওপর হামলা চালায়। এসময় শ্রমিকেরা প্রাণ বাঁচাতে স্কুলের একটি কক্ষে আশ্রয় নিলে সেখানে ঢুকে তাদের বেধড়ক পেটানো হয় এবং অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এসময় স্কুল ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় শ্রমিকদের নির্মাণকাজে মালামাল আনার জন্য ব্যবহৃত একটি নসিমন।

স্থানীয় তপতি মন্ডল নামে এক নারী বলেন, ‘মায়ের ঘরে (কালী মন্দির) সন্ধ্যাবাতি দিচ্ছিলাম। তখন শ্রমিকরা জানালা দিয়ে দেখছিলেন কোনো অসুবিধা হয়েছে কিনা। তারপর আমি বাড়ি গিয়েছিলাম ঘোষি নিতে। তখন ওরা (শ্রমিকরা) রড ওঠানামা করতেছিল আর নিজেরাই চিৎকার চেচামেচি করতেছিল। পরে শুনি পান মন্দিরে আগুন লাগেছে। গিয়ে দেখি, মা একদম পুড়ে গেছে। আমি দ্রুত মায়ের শরীরে থাকা কাপড়ের আগুন নেভাই। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে গেল। এই যা। তারপর কী হলো দেখিনি।’

মন্দিরে লাগা আগুন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘কে বা কারা মন্দিরে আগুন দিয়েছে আমি দেখিনি।’

বাধার মুখে পড়ে পুলিশ প্রশাসন

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলার খবর পেয়ে প্রথমে মধুখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও মাগুড়া জেলা পুলিশ ও র‍্যাবের একাধিক টিম সেখানে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদের ওপরও চড়াও হয়। এসময় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ আহত হন। পরে রাত ১টার দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় আড়াই শ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

উত্তেজিত জনতাকে সরিয়ে দিয়ে স্কুলের ভেতর থেকে গুরুতর অবস্থায় সাত শ্রমিককে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে নেওয়ার পথে নির্মাণশ্রমিক আরশাদুল ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বড় ভাই আশরাফুল মারা যায়।

এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে এখন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন ও মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, ‘এখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছিলেন। উত্তেজিত জনতা ভেতরে ঢুকে তাদের পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ওসি ফোর্সসহ এখানে আসে। তাদের সঙ্গে মধুখালী উপজেলার ইউএনও ছিলেন। তারা এখানে এসে উত্তেজিত জনতার হাতে আটকে পড়েন। খবর পেয়ে আমরা ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত ফোর্সসহ এসে তাদেরসহ আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে ফরিদপুরে হাসপাতালে পাঠাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। গ্রামবাসীসহ সবাইকে অনুরোধ করব কেউ যেন আইনকে নিজের হাতে তুলে না নেয়। বিষয়টি ঢাকা থেকে আইজি মহোদয় নিজেও সবসময় খবরা-খবর রাখছেন।’

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেওয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। তারা এই শ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের অবস্থা খারাপ।’

তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করতে এলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। তখন কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।’

ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পাশাপাশি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা