হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩৮ এএম
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩১ পিএম
টাঙ্গাইলের বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার মাঝে সাঁকো দিয়ে বংশাই নদ পার হচ্ছে মানুষ।সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
‘কত এমপি আইলো, গেল, কেউ আমাগো কষ্ট বুঝল না। কেউ কথা রাখল না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এমপি হইল, কিন্তু আমরা সেতু পাইলাম না। তারপর শওকত মোমেন শাহজাহান এমপি হইল, তার ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় হইল, সেও কথা রাখে নাই। আবার জোয়াহের এমপি হইছিল, কথা দিছিল, সেও কথা রাখল না। এখন আবার জয় এমপি হইছে। এখন কি আমরা সেতু পামু?’ বলছিলেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীছেও গ্রামের কুলসুম বেগম। ৫৩ বছর বয়সি এই নারী দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘ভোট নেওয়ার সময় সবাই অনেক কথা কয়, কিন্তু কাম করে না। আমাগো জন্মের পর থেকেই এই নদী দেখতাছি। সেতু হই নাই।’
বংশাই নদের এ-পারে বাসাইল ও-পারে সখীপুর। দুই পারের মানুষগুলোর মধ্যে গভীর সম্পর্ক। একই সংসদীয় আসন, শিক্ষাদীক্ষা, বাজারঘাট, কেনাকাটাসহ সবই হয় একসঙ্গে। তবু সারাজীবন তারা দুই পারের বাসিন্দা। নদীর ওপর একটি সেতুর দাবি আজন্ম তাদের। দুই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
মাজেদুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। তখন নৌকা দিয়ে আমাদের পারাপার হতে হয়। প্রতিদিন মোটরসাইকেল এ-পারে রেখে ও-পারে যাই। এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে জানি না। সরকার দেশের কত উন্নয়ন করতেছে। যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিত তাহলে আর দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
প্রতিদিন সুন্না বাজারে ঝালমুড়ি বেচতে যান কাঙ্গালীছেও গ্রামের আরফান মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়ে শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকায় করে বাজারে আসি। আমরা খুব কষ্টে আছি। কত এমপি ও চেয়ারম্যান আইলো, গেল, কেউ আমাদের কষ্ট বুঝল না। সরকারের কাছে দাবি আমাদের একটি ব্রিজ দেন।’
বাসাইল উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের সুন্না বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এ নদের ওপর সেতু না থাকায় যুগ যুগ ধরে ভোগান্তির মধ্যে জীবনযাপন করছেন দুই পারের মানুষ। উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত সুন্না বাজার ঘেঁষে বংশাই নদের ওপর সখীপুর-বাসাইল সংযোগ সেতু হলে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন তারা। একটি হাট, একটি আলিম মাদ্রাসা, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি কিন্ডারগার্টেন থাকায় প্রতিনিয়ত নদী পার হতে হয় দুই উপজেলার বাসিন্দাদের। তাদের একমাত্র চলাচলের মাধ্যম বংশাই নদীর ওপর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা। অনেক সময় এই নদী পারাপারের জন্য বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ জনগণসহ শিক্ষার্থীদের। বর্ষা মৌসুমে ভারী মালামাল, গাড়ি, মোটরসাইকেল পারাপার করতে না পারায় বিপাকে পড়তে হয় তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্না বাজার ঘেঁষে বংশাই নদের ওপর সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষজন। প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ বাসাইল-সখীপুরের হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে রোগী বহনের কোনো যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা নেই। সখীপুর উপজেলার কাঙ্গালীছেও, দাঁড়িয়াপুর, যাদবপুর, বেড়বাড়ী, প্রতিমা বংকী, শোলাপ্রতিমা, বোয়ালী, দেওবাড়ী, লাঙ্গুলিয়া, চাকলাপাড়ার গ্রামবাসীসহ উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়া বাসাইল উপজেলার সুন্না, গিলাবাড়ী, কল্যাণপুর, কলিয়া, কাউলজানীসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ ওই সড়ক দিয়ে পাশের সখীপুর উপজেলায় যাতায়াত করে।
শিহাব শিকদার নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে আমাদের নৌকা দিয়ে পার হতে হয়। শুকনো মৌসুমে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ভয়ে ভয়ে পার হই। একটি ব্রিজ হলে আর কোনো ভয় থাকবে না। সময়ও কম লাগবে। সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। সরকারের কাছে দাবি, এখানে একটা ব্রিজ চাই।’ তবে এখনও সরকারের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।
বাসাইল উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনো জায়গা থেকে অনুমোদন পাব বা পাচ্ছি এ-রকম কোনো অবস্থা নেই। ওই জায়গায় একটি ব্রিজ তৈরি হলে বাসাইল ও সখীপুর দুই উপজেলার মধ্যে সুন্দর যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান এমপি যখন এর আগে এমপি ছিলেন তখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সবার সার্বিক সহযোগিতা চাই। আমাদের বর্তমান এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান উদ্বিগ আছেন। তাদের সহযোগিতা নিয়ে যাতে এই ব্রিজটা আমরা করতে পারি বা একটি পরিকল্পনা দাখিল করতে পারি এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা আছে। আমি উদ্যোগ নেব।’
তবে বাসাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম শুনিয়েছেন আশার কথা। তিনি দাবি করেছেন, ‘বর্তমান এমপি অনুপম শাহজাহান জয় একটি ব্রিজ অনুমোদন করিয়েছেন। আমরা আশাবাদী সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে এক-দেড় বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে। বর্তমান এমপি তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।’