× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপজেলা নির্বাচন: হলফনামা

মাত্র পাঁচ বছরেই সম্পদে টইটম্বুর কুষ্টিয়ার আতা

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২১ এএম

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩১ এএম

আতাউর রহমান আতা। ছবি : সংগৃহীত

আতাউর রহমান আতা। ছবি : সংগৃহীত

আলাদিনের চেরাগের দৈত্যকেও যেন হার মানিয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। মাত্র পাঁচ বছরে তার নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১৭৬ গুণের বেশি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট, দোকানপাট এবং কৃষি ও অকৃষি জমির পরিমাণও। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আতাউর রহমান আতা কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলেও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন আতাউর রহমান আতা। ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা ওই হলফনামায় তিনি ব্যবসা, অস্থাবর এবং স্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকার সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করেন। বার্ষিক আয় দেখান ১ কোটি ১৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর মাত্র তিন মাস পর পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হন তিনি। সেই নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫ লাখ টাকার ওপরে। তিন মাস আগের হিসাবে আতা ও তার স্ত্রী শাম্মী আরা পারভীনের নগদ অর্থ না থাকলেও পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের হলফনামায় তার নিজের নামে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকা নগদ দেখানো হয়।

সেই আতাই উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর যেন গুপ্তধনের সন্ধান পেয়ে যান। রাতারাতি তার সম্পদের পরিমাণ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। গত পাঁচ বছরে তার নগদ টাকা বেড়েছে ১৭৬ গুণের বেশি। এর মধ্যে ব্যাংকে জমা আছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। আর এফডিআর আছে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। এ ছাড়া মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে ৬ গুণ। পাঁচ বছরে আতার অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট ও দালানকোঠার সংখ্যাও বেড়েছে। আরও বেড়েছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দোকানের সংখ্যা। কৃষি ও অকৃষি জমির পরিমাণও হু-হু করে বেড়েছে। আগে লাখ টাকা দামের গাড়িতে চড়লেও এখন চড়ে বেড়ান কোটি টাকা দামের গাড়িতে।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আতাউর রহমান আতার জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তিনি স্থাবর, অস্থাবর মিলিয়ে ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮৭ টাকা সমমূল্যের সম্পদের মালিক। পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন ঠিকাদারি ব্যবসা। তবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তার ঠিকাদারি কাজ করা নিয়ে বিতর্ক আছে। তার বিরুদ্ধে নানাভাবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক ও কয়েকটি সরকারি সংস্থা তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছে বলে জানা যায়। 

পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে আতাউর রহমান আতা নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে কুষ্টিয়ায় বহুতলবিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ঢাকায় কিনেছেন একাধিক ফ্ল্যাট। হলফনামায় হাউজিং এস্টেটে ডি-৬ ও ডি-৭ প্লটে নির্মাণাধীন বাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়াও তার রয়েছে রাজধানীর জারা টাওয়ারে পার্কিংসহ ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, পাইকপাড়া আহাম্মদনগরে রয়েছে পার্কিংসহ ২৯ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট এবং মিরপুরের ফেইথ গার্ডেনে ৩১ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। শুধু তা-ই নয়, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের শহরে তার একাধিক দোকান রয়েছে।

যার মধ্যে কুষ্টিয়া হাই স্কুল সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলার বি-ব্লকে ১০ লাখ টাকা মূল্যের ১ হাজার বর্গফুটের ৬টি দোকান, পরিমল টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ১৮ লাখ টাকা মূল্যের দোকান, ৮ লাখ টাকা মূল্যের কেন্দ্রীয় সমবায় মার্কেটের ২২নং দোকান, ১৬ লাখ টাকা মূল্যের কুষ্টিয়া হাই স্কুল সুপার মার্কেটের ২ ও ৩নং দোকান এবং বটতৈল এলাকায় ডাকবাংলো সুপার মার্কেটে ১৪ লাখ টাকা মূল্যের ৭টি দোকান রয়েছে আতার নামে। এ ছাড়া নামে-বেনামে তার আরও অনেক সম্পদ থাকার কথা শোনা যায়। সর্বশেষ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তার ও তার স্ত্রীর নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সেই মামলায় তারা জামিনে রয়েছেন। 

শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও হলফনামায় দুই রকম তথ্য দিয়েছেন আতা। সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তিনি এইচএসসি পাস। কিন্তু এবার উল্লেখ করেছেন এসএসসি পাস। এদিকে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রী শাম্মীর নামে ১৫ লাখ টাকা নগদ দেখানো হলেও এবারের হলফনামায় স্ত্রীর নামে নগদ কোনো টাকাই দেখানো হয়নি। এ ছাড়াও ডি-০৭ হাউজিং এস্টেটে ৬ লাখ ১২ হাজার টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের অর্ধেকের মালিক হিসেবে স্ত্রীর নাম থাকলেও এবারের হলফনামা থেকে ওই তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে।

হলফনামা অনুযায়ী, আতার আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি খাত থেকে ১৫ হাজার টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ টাকা, ব্যবসা থেকে ২ কোটি ৬৫ লাখ ১ হাজার ২০০ টাকা এবং শেয়ার/সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত থেকে ৩৭ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৪ টাকা আয়ের কথা বলা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে, ৯০ লাখ টাকা মূল্যের টয়োটা প্রাডো (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৭-৬৩৫৩) গাড়ি, ২ লাখ ৫ হাজার ৬৫৩ টাকা মূল্যের (কুষ্টিয়া-হ-১৫-৮৬৬১ ও কুষ্টিয়া-হ-১৫-৮৬৬২) দুটি মোটরসাইকেল, ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার। 

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হলফনামায় আতা স্থাবর সম্পদ হিসাবে ১০ বিঘা কৃষিজমির মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ২৩ দশমিক ৩৭ শতক কৃষিজমির মূল্য ৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, ১৫ দশমিক ১৮ শতক কৃষিজমির মূল্য ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৭ দশমিক ৪৯ শতক কৃষিজমির মূল্য ২ লাখ ২২ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়াও স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি দশমিক শূন্য ৮২৫ একর অকৃষি জমির মূল্য ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৬ কাঠা অকৃষি জমির মূল্য ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, দশমিক ৫৯৫০ একর অকৃষি জমির মূল্য ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা, দশমিক শূন্য ৬১৯ একর অকৃষি জমির মূল্য ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, ৩ দশমিক ৫০ কাঠার প্লটের মূল্য ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং হাউজিং এস্টেটে ডি-৬ ও ডি-৭ আবাসিক প্লটের মূল্য ১৬ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা উল্লেখ করেছেন। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে ১ লাখ টাকা মূল্যের ৩২ বোরের একটি পিস্তল ও ১ লাখ ১ হাজার টাকা মূল্যের একটি শটগান।

গত পাঁচ বছরে আতাউর রহমান আতার সম্পদ প্রায় ১৩ গুণের কাছাকাছি বাড়লেও সেই তুলনায় তার ঋণের পরিমাণ নগণ্য। আগের দুই হলফনামায় তার কোনো ঋণ না থাকলেও এবার পূবালী ব্যাংক, কুষ্টিয়া শাখা থেকে গাড়ি কেনা বাবদ ৩০ লাখ ১৬ হাজার ৯৮২ টাকা ঋণ নেওয়ার তথ্য দিয়েছেন তিনি।

এদিকে আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে তার স্ত্রী শাম্মী আরা পারভীনের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহায়তার অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বাদী হয়ে দুজনের নামে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ (বিশেষ আদালত) মো. আশরাফুল ইসলামের আদালতে গত ১১ মার্চ একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ৪ এপ্রিল আইনজীবীর মাধ্যমে তারা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত ১০ হাজার টাকার বন্ডে এ মামলায় অভিযোগ দাখিল হওয়া পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

হলফনামার তথ্য ও পাঁচ বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়ে আতাউর রহমান আতার সঙ্গে কথা বলতে তার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তা রিসিভ হয়নি। পরে এসএমএস পাঠানো হয়। কিন্তু তারও জবাব পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা