টাঙ্গাইল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৫ পিএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৩৯ পিএম
টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষকে সমাবেশ করতে বাধা দেয় প্রশাসন। প্রবা ফটো
টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের একই স্থানে একই সময়ে সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ এড়াতে ওই স্থানে কোনো পক্ষকেই সমাবেশ করতে দেয়নি জেলা প্রশাসন। ফলে শহরের বিভিন্ন স্থানে সংক্ষিপ্ত পথসমাবেশ করে দুই পক্ষই।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১০টায় পৌর শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে একই সময় সমাবেশের আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ সচেতন নাগরিক সমাজ ও জেলা শ্রমিক ফেডারেশন।
টাঙ্গাইলের সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে রয়েছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীক সমর্থিতরা। যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল প্রমুখ।
জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষে রয়েছেন নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। যার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি বালা মিয়া, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিন প্রমুখ।
১০টায় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও বিবদমান দুই গ্রুপের কাউকেই শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে সমাবেশস্থলে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। ফলে টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ যথাক্রমে পৌরসভার সামনে ও থানাপাড়া ‘রবি’ অফিস মোড়ে এবং পূর্ব আদালতপাড়া মোড়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের জমায়েত করে সংক্ষিপ্ত পথসমাবেশ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে ও শহরের মোড়ে মোড়ে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া পুলিশ, ডিবি ও র্যাবের ভ্রাম্যমাণ টহল দলকে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। সকালে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ (ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা) টাঙ্গাইল পৌর ভবনের সামনে জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়।
সকাল ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপির বাসভবনের সামনে থেকে মিছিল বের করার চেষ্টা করা হলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে তারা সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
এতে বক্তব্য দেন, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, কেন্দ্রীর যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি বালা মিয়া, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিন, টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদ প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, শান্ত টাঙ্গাইলকে অশান্ত করার মধ্য দিয়ে চক্রান্তকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলা কার্যক্রমকে বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এ ছাড়াও তারা শ্রমিকদের নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন করছে। এর প্রতিবাদে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছিল।
একই সময় টাঙ্গাইল পৌরসভার ভবনের সামনে থেকে শহর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিচারের দাবিতে মিছিল বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভা মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরের নেতৃত্বে মিছিলটি পৌরসভার চত্বর থেকে রাস্তায় নামার পরেই পুলিশ বাধা দেয়। পরে তারা পৌর ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
এতে বক্তব্য দেন, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম হোসেন কিসলু ও মানবাধিকারকর্মী মাহবুদা শেলী।
এ ছাড়া তারা থানাপাড়া ‘রবি’ অফিস মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এখানে বক্তব্য দেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাতিরুজ্জামান খান সুখন প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক ধর্ষণ মামলা রয়েছে। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাকে সকল সামাজিক সংগঠন থেকে অব্যাহতি, গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সমাবেশ করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার রাতে পৌরসভার সামনে ও শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে পুরো শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গাইল শহরের পরিস্থিতি বর্তমানে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘দুই পক্ষ একই স্থানে সমাবেশ ডাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় কোনো পক্ষকেই সমাবেশ না করতে দেওয়ার বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’