টাঙ্গাইল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২০ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩৮ এএম
টাঙ্গাইল পৌরসভার সামনে থেকে অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
একই জায়গায় সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার সামনেসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে শহরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাতে পৌরসভার সামনে ও শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে কয়েক দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনার পর থেকে পুরো শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
টাঙ্গাইল সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাকিব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছিল। সেখান থেকে ককটেল সাদৃশ্য কয়েকটি বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো ককটেল নাকি অন্যকিছু তা নির্ণয়ে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকটি মোটরসাইকেল করে হেলমেটধারী অজ্ঞাতরা চলন্ত অবস্থায় ককটেলগুলোর বিস্ফোরণ ঘটায়। টাঙ্গাইল পৌরসভার সামনে কয়েকটি অবিস্ফোরিত ককটেলও পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো যাবে। এ ঘটনার পর টাঙ্গাইল শহরে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এদিকে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষ ‘পৃথক দুটি ব্যানারে’ আজ বৃহস্পতিবার একই স্থানে একই সময় সমাবেশ আহ্বান করেছে। এক পক্ষে রয়েছে বিগত জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে ‘নৌকা’ প্রতীকের সমর্থকরা। অপরদিকে সক্রিয় রয়েছে ‘ঈগল’ প্রতীকের সমর্থকরা। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চলছে উত্তেজনা।
ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা টাঙ্গাইলের ‘সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে’ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সমাবেশ আহ্বান করেছে। তাদের দাবি, ধর্ষণ মামলার আসামি শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ থেকে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরকে গ্রেপ্তার ও বিচারের।
অপরদিকে জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে একস্থানে একই সময় শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এর সমর্থনে রয়েছেন বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা। এর নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি বালা মিয়া, জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি ও ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আমিনুর রহমান আমিন।
জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ছোট মনিরের বড় ভাই টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির। বড় মনির জেলা বাস কোচ মিনি বাস মালিক সমিতির মহাসচিব। এছাড়াও জেলা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি ও টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি পদে যুক্ত রয়েছেন।
টাঙ্গাইলের সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে ঈগল প্রতীক সমর্থিতদের নেতৃত্বে রয়েছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম সিরাজুল হক আলমগীর, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাহান আনছারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র সাইফুজ্জামান সোহেল।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, বড় মনি একাধিক ধর্ষণ মামলার আসামি। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন তাকে সব সামাজিক সংগঠন থেকে অব্যাহতি এবং গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি দেয় পৌরসভা। কয়েকদিন আগেই সচেতন নাগরিক সমাজকে বৃহস্পতিবার সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং সেই চিঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল বলেন, সচেতন নাগরিক সমাজের সমাবেশ পন্ড করার জন্য শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে পাল্টা সমাবেশ ডাকা হয়েছে। আমরা সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের প্রতি একাধিক সংসদ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। সমাবেশের উপর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা দিলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনে অবৈধ হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। তারা শ্রমিকদের নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন করছে। এর প্রতিবাদে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। এতে সারা জেলা থেকে ফেডারেশনভুক্ত শ্রমিকরা অংশ নেবে।
তিনি আরও বলেন, সমাবেশের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌরসভায় আবেদন করা হয়েছে। তাদের সমাবেশে জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান এমপিসহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় অনেক নেতাই অংশ নেবেন।
গতকাল বুধবার বিকালেও উভয়পক্ষ সমাবেশের প্রচারণা চালিয়েছে। তারা তাদের সমর্থকদের সমাবেশে উপস্থিত নিশ্চিত করতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং আশপাশের উপজেলায়ও ছিলো তৎপর।
দুইপক্ষের সমাবেশের ব্যাপারে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক হারেছ আলী বলেন, আজ বৃহস্পতিবার পৌর উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, সমাবেশের জন্য কোনো পক্ষকেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে যা যা করা প্রয়োজন প্রশাসন তা করবে।
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও বর্তমান এমপি ছানোয়ার হোসেন।